ফেসবুক পেজ লাইক: কী, কেন, কীভাবে?

ফেসবুক পেজ লাইক: কী, কেন, কীভাবে?
শেয়ার করুন

ফেসবুক পেজ লাইক: ফেসবুক দিয়ে যারা বিজনেস পরিচালনা করছেন তাদের প্রত্যেকের কাছে এই শব্দটির অত্যন্ত পরিচিত। কিন্তু ফেসবুক দিয়ে বিজনেস পরিচালনার ক্ষেত্রে এবং বেচাকেনার জন্য পেজ লাইক কেন প্রয়োজন?  

সে সম্পর্কে অনেকেরই সুস্পষ্ট ধারণা নেই।

অনেকে মনে করেন ফেসবুকে পেজ লাইক বাড়লে বেচাকেনা বাড়বে,  কিন্তু পেজ লাইক বাড়লে কিভাবে বেচাকেনা বাড়বে সে বিষয়ে তিনি স্পষ্ট জানেন না।

আসুন জানি,

  • ফেইসবুক পেইজ লাইক কি?  
  • পেইজ লাইক আপনার বিজনেস পেজের জন্য কেন ও কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ?
  • কিভাবে আপনার ফেসবুক বিজনেস পেজের জন্য পেজ লাইক নিয়ে  আসবেন?
  • কোন ধরনের পেজ লাইক  আপনার জন্য আদর্শ?

পেজ লাইক কি?

কেউ যখন একটি ফেসবুক পেজ পছন্দ করে, তখন সে পেইজটি লাইক দিয়ে রাখে। যার অর্থ সে পেজটির কন্টেন্টগুলো পছন্দ করছে এবং অনুরুপ কন্টেন্ট দেখতে চায়।  

আবার কেউ একজন একটি পেজ ফলো করছে তার অর্থ সে পেজটির কনটেন্ট তার নিউজফিডে দেখতে চায়।

একটি বিজনেস পেজে কতগুলো লাইক বা ফলোয়ার রয়েছে সেটি বিজনেস পেজের বামদিকের কলামে দৃশ্যমান থাকে। 

এখানে কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে,

  • কেউ যখন একটি বিজনেস পেজ লাইক করছে তখন সে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেটি ফলো করতে শুরু করেছে।
  • একটি বিজনেস পেজে লাইক দিয়ে রাখলেও একই সাথে সে চাইলে পেজটি আনফলো করে রাখতে পারে।
  • লাইক দেয়া অবস্থায় আনফলো করে রাখলে ব্যক্তি সেই বিজনেস পেজ এর কোন আপডেট তার নিউজফিডে পাবেনা। কিন্তু সে পেজের সাথে তখনো যুক্ত আছে।
  • আবার একটি পেজ লাইক না করেও সেটি ফলো করা যায়। 

 

পেইজ লাইক আপনার বিজনেস পেজের জন্য কেন ও কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ?

গত ৫ বছর আগেও ফেসবুক ব্র্যান্ড পেজের জন্য পেজ লাইক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। একটি বিজনেস পেইজের লাইক সংখ্যা যতবেশি হবে,  সেই পেজের পোষ্টগুলো অডিয়েন্স সবার আগে দেখতে পাবে।  

এভাবেই বিগত বছরগুলোতে অনেক এফ কমার্স বিজনেস সফলভাবে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করেছে। কারণ ফেসবুকের শুরুর দিকে পোষ্টের অর্গানিক রিচের পরিমাণ বেশি ছিল।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুকের  অ্যালগরিদমে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন নিয়ে আসায় পেজের অর্গানিক রিচ তলানিতে নেমে এসেছে। 

বর্তমান সময়ে আপনার পেইজে যদি ১ লক্ষ অডিয়েন্স থাকে, তাহলে সবাই আপনার পেজের পোস্ট দেখতে পাবে এমনটি হয় না। 

সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ফেসবুকে ব্র্যান্ড পেজের পরিমান বহুগুণে বেড়ে গেছে। প্রায় ২ বিলিয়ন অ্যাক্টিভ অডিয়েন্সের এই বিশাল প্লাটফর্মে শুধুমাত্র বেশি সংখ্যক লাইক থাকা পেইজকে অডিয়েন্সের নিউজফিডের প্রথমে স্থান দেবার পদ্ধতি থেকে ফেসবুক বের হয়ে এসেছে।

কারণ এটি দ্বারা মানুষ অনেক ভুল তথ্য পাচ্ছে। শুধুমাত্র পেইজ লাইক বেশি হবার জন্য আমার পছন্দ না হওয়া সত্তেও অনেক ধরনের পোষ্ট আমরা দেখতাম।

কিন্তু অ্যালগরিদমে পরিবর্তনের কারনে আমরা ঠিক যে ধরনের কন্টেন্ট দেখতে পছন্দ করি, সেই পোষ্টগুলো আমাদের নিউজফিডে প্রদর্শিত হয়।  

ফেইসবুক এই জায়গায়  অডিয়েন্সদের পছন্দ ও অভিজ্ঞতাকে  গুরুত্ব দিয়েছেন

ফেসবুকের এই নতুন পরিবর্তনের একটি মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে,  একটি বিজনেস পেইজের কোন পোস্টে অডিয়েন্স যত বেশি এঙ্গেজ হবে,  সেই পোস্টটিকে ফেসবুক অডিয়েন্সের জন্য প্রাসঙ্গিক মনে করবে এবং সেটিকে আরো বেশি মানুষের নিউজফিডে পৌঁছে দিবে।

একসময় ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখা বেশিরভাগ অডিয়েন্সদের নিউজফিডে  অর্গানিক ভাবে পোষ্টগুলো রিচ করতো। 

কিন্তু ফেসবুক ব্যবহারকারীদের পছন্দ ও অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দিয়ে অ্যালগোরিদমে পরিবর্তন নিয়ে আসায়, অর্গানিক ভাবে পেজের পোষ্ট অডিয়েন্সদের কাছে আগের মতো রিচ হয় না।

বর্তমান সময়ে অনেকেই এই অভিযোগ করছেন যে, তাদের ফেসবুক বিজনেস পেজের রিচ  এবং এনগেজমেন্ট অনেক কমে গেছে।  এর কারণ মূলত ফেসবুকের অ্যালগোরিদমের পরিবর্তন।

আরও পড়ুনঃ

ফেসবুক মার্কেটিং রহস্য – কী করবেন আর কী করবেন না

ফেসবুক বর্তমানে পেইড মার্কেটিংকে গুরুত্ব দিচ্ছে, ফলে ফেসবুকে একটি ব্র্যান্ড পেজকে পপুলার করতে হলে অবশ্যই  টার্গেট অডিয়েন্সদের উদ্দেশ্য করে নিয়মিতভাবে পেইজ লাইক এড ক্যাম্পেইন চালিয়ে যেতে হবে। 

ফেসবুক পোস্টের রিচ বেশি হবে না কম হবে সেটি এখন পেজের লাইক সংখ্যার উপর নির্ভর করে না। পেজ রিচ হবার পরিমান নির্ণয় হয় অডিয়েন্স পোষ্টে কীভাবে এঙ্গেজ হচ্ছে সেই বিষয়টির উপর।

তাই আপনার প্রশ্নটি যদি এমন হয়, আমার পেজে ৫০হাজার বা এক লক্ষ পেজ লাইক রয়েছে তার পরেও কেন আমার পেইজের পোষ্টগুলো অডিয়েন্স রিচ করছে না?  তবে আশা করি উপরের আলোচনা থেকে সে বিষয়ে ধারণা পেয়েছেন। 

একটি বিজনেস পেজে লাইক দিয়ে রাখা মানে সেই পেজের পোস্ট গুলো নিউজফিডে দেখবেন এমন নয়? 

আপনার ফেসবুক পেজে যদি ১ লক্ষ লাইক থাকে এর অর্থ এই নয় যে, ১ লক্ষ মানুষ আপনার বিজনেস পেজের পোস্টগুলো পছন্দ করছে এবং নিউজফিডে চায় অথবা আপনার বিজনেস পেজ থেকে প্রোডাক্ট কিনবে বলে সম্মত হয়েছে।

যদি এমন হয় আপনার কোন পোস্টে কেউ রিভিউ  দিয়েছে বা পোস্টে কেউ কমেন্ট  করেছে  অথবা পোস্টটি শেয়ার  করেছে তবে সেই ইন্টারঅ্যাকশন গুলোকে ফেইসবুক মূল্যায়ন করে। 

ফেসবুক মনে করে এই পোস্টটি তার জন্য উপকারী  কারন অডিয়েন্স সেটি পছন্দ করছে এবং ফেইসবুক সেই পোস্টটিকে আরো বেশি সমবৈশিষ্ট্য  অডিয়েন্সদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়। 

তাই আপনি যদি ফেসবুক বিজনেস পেজ লাইক থেকে সুবিধা আদায় করতে চান, তবে আপনাকে অবশ্যই শুধু মাত্র পেজ লাইক নিয়ে সন্তুষ্ট থাকলে  চলবে না, অডিয়েন্সদের পোষ্টের সাথে এঙ্গেজ রাখতে হবে লাইক, শেয়ার বা কমেন্ট করতে উৎসাহিত করার মাধ্যমে। 

আপনার ফেসবুক পেজের অডিয়েন্স সংখ্যা যতই কম হোক না কেন তারা যদি আপনার  পেজের পোস্টগুলো পছন্দ করে এবং সেটিতে এঙ্গেজ হয়,  তবেই আপনার বিজনেস পেইজটিকে ফেসবুক অন্যদের থেকে অধিক জনপ্রিয় মনে করবে। 

তাহলে  আমরা যা বুঝতে পারছি,  শুধুমাত্র পেইজ লাইক বাড়িয়ে তুললেই হবে না,  গুরুত্ব দিতে হবে পেইজ বা পোস্টে অডিয়েন্সদের এঙ্গেজমেন্টের কোয়ালিটির উপর।  

ফেসবুকের পেজ লাইকের পরিমান আপনার বিজনেসের বেচাকেনার পরিমাণকে বাড়িয়ে তোলে না

জানলে অবাক হবেন একটি গবেষণায় দেখা গেছে একটি ব্র্যান্ড পেজের মোট লাইক সংখ্যার মাত্র ১%  অডিয়েন্স সেই পেজটি ভিজিট করে, যদিও একজন ফেসবুক ইউজার তার সারাদিনের  বেশ বড় একটি সময় ফেসবুক নিউজফিড কাটিয়ে দেয়। 

তাই ফেসবুক পেইজ লাইক বাড়লে আপনার পেজের বেচাকেনা বাড়বে সেই ধরনের চিন্তা নিয়ে আত্মতুষ্টিতে থাকবেন না। 

তাহলে কি আমরা ফেসবুক পেইজ লাইক বাড়ানোকে গুরুত্ব দিবো না? 

অবশ্যই আমরা ফেইসবুক পেজ লাইক বাড়ানোর প্রতি গুরুত্ব দিবো, কারণ এর কিছু সুবিধা রয়েছে।  

পেইজ লাইক আপনার বিজনেস পেজের জন্য কেন ও কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ? 

  •  ফেসবুক পেইজ লাইক  বিজনেসের সোশ্যাল প্রুফ হিসেবে কাজ করে

আপনি একটি  দীর্ঘ সময় ফেসবুক ব্র্যান্ড পেজ পরিচালনা করছেন এবং মানুষ আপনার বিজনেস টিকে পছন্দ করছে। কতজন মানুষ আপনার বিজনেসটি পছন্দ করছে এটি  বোঝা যায় পেজের লাইক সংখ্যা দেখে।  

যার যত বেশি পেইজ লাইক এবং ফলোয়ার সংখ্যা, সামাজিক মাধ্যমে তার স্বীকৃতি ততবেশি বলে মনে করা হয়।

টপ টেন ফেসবুক বিজনেস পেজ ইন বাংলাদেশ লিখে গুগলে সার্চ দিলে প্রথম পেজে সবার উপরে চিত্রের রেজাল্টগুলো পাবেন।

এই ক্রমানুসার নির্ধারণ হয়েছে তাদের ফেসবুক ফলোয়ারদের সংখ্যার উপর ভিক্তি করে,

বিসিবি এর ফলোয়ার সংখ্যা সবার চেয়ে বেশি প্রায়,  9,093,529

প্রথম আলোর ফলোয়ার সংখ্যা  8,732,244 যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ,

সাকিব আল হাসানের ফলোয়ার সংখ্যা 8,555,307 যা তৃতীয় সর্বোচ্চ।

চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে বিবিসি বাংলা যার পেজ লাইক  7,714,552

সুতরাং একটি ফেসবুক পেজের লাইক বা ফলোয়ারের সংখ্যা দ্বারা. অনুমান করা হয় সেই পেজের গ্রহণযোগ্যতা ও গুরুত্ব।  

অনলাইন কেনাবেচার ক্ষেত্রেও এটি একইভাবে প্রয়োজন, আপনি নিশ্চয়ই ৩০০ লাইক আছে এমন কোন বিজনেস পেজ থেকে কেনাকাটা  করতে চাইবেন না। 

যে বিজনেস পেজটির পেজ লাইক সংখ্যা সর্বনিম্ন ১০ হাজার রয়েছে এমন একটি পেজকে বেছে নিতে চাইবেন। 

যদিও ফেসবুক পেইজ লাইক সরাসরিভাবে বিজনেসের রেভিনিউ এর সাথে সম্পর্কিত না, কিন্তু একটি  ব্র্যান্ড পেজের অথরিটি তৈরিতে এটি  সাহায্য করে।

  • ব্র্যান্ড পেজের কমিউনিটিকে চাঙ্গা রাখতে

একটি ফেসবুক ব্র্যান্ড পেজে লাইক দেবার পর শেষ কবে সেই পেইজটি আপনি ভিজিট করেছেন?  মনে করতে পারবেন? 

এটি মনে করা সত্যি কষ্টকর। কারণ আমরা হয়তো সেই ব্র্যান্ড পেজটি পছন্দ করি,  কিন্তু সক্রিয়ভাবে সেটির সাথে যুক্ত থাকিনা।

নতুন পেইজ লাইকের অর্থ নতুন  ফ্যানবেজ তৈরি হওয়া।  নতুনরা  প্রথমদিকে বেশ একটিভ থাকে।

একটি পেইজের  অডিয়েন্স সংখ্যা যখন বাড়ছে পাশাপাশি পুরনো  অডিয়েন্সদের  অ্যাক্টিভ থাকার  পরিমাণ কমে যাচ্ছে। 

ফেইসবুক পেইজের অ্যাক্টিভ অডিয়েন্সের ভারসাম্য বজায় রাখতে আপনাকে অবশ্যই নতুন ফ্যান ফলোয়ার্স  বাড়ানোর দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। 

যার প্রধান  উপায় হলো পেজ লাইক।  

  • দৃশ্যমানতা বাড়িয়ে রাখতে সাহায্য করে

খেয়াল করে দেখবেন আপনি যখন একটি পেইজে লাইক করেন তখন রিলেটেড কিছু পেজের রেকমান্ডেশন আপনার পেজে অটোমেটিক ভাবে চলে আসে।

অর্থাৎ আপনার  পছন্দের ধরনের উপর নির্ভর করে ফেসবুক আপনাকে কিছু রিলেটেড ফেসবুক পেজ রিকমেন্ডেড করে।

ঠিক একই ভাবে  কেউ যখন আপনার পেইজটি লাইক করছে তখন তার মিউচুয়াল ফ্রেন্ড এর নিউজফিডে আপনার লাইক করা পেজগুলো ফেসবুক তাকে সাজেস্ট করবে। 

যেহেতু আপনি সেই পেজগুলো পছন্দ করেন  তাই আপনার মিউচুয়াল ফ্রেন্ড হিসেবে বন্ধুদেরও সেই পেজ গুলো পছন্দ করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ফেসবুক মনে করে।  

এতে করে  আপনার ফেসবুক পেজের দৃশ্যমানতা বেড়ে যায়।

যত বেশি নতুন কাস্টমারদের আপনি নিয়ে আসতে সক্ষম হবেন ততবেশি একই ধরনের  বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন  অডিয়েন্সদের কাছে  আপনার পেজটিকে ফেসবুকে  রিকমেন্ড করবে।

কিভাবে আপনার ফেসবুক বিজনেস পেজের জন্য পেজ লাইক নিয়ে  আসবেন?

অর্গানিক রিচ কমে গেছে, নতুন কাস্টমারদের  রিচ করা আগের চেয়ে অনেক কঠিন। এমন একটি পরিস্থিতিতে কীভাবে নতুন পেজ লাইক নিয়ে আসবেন।

এখানে কিছু পরামর্শ দেয়া হলো,  যা আপনার ফেসবুক পেইজের জন্য নতুন পেইজ লাইক নিয়ে আসতে সাহায্য করবে।

  • ফেসবুক এড এর মাধ্যমে

যদি আপনি প্রশ্ন করেন বর্তমান সময়ে ফেসবুক পেজে নতুন অডিয়েন্স নিয়ে আসার জন্য কি উপায়? তবে নিঃসন্দেহে ফেসবুক এড উৎকৃষ্ট সমাধান।

ফেসবুক এড এর বিভিন্ন রকম অবজেক্টিভ রয়েছে যার মধ্যে একটি হচ্ছে এঙ্গেজমেন্ট। সাধারণত ফেসবুক পেইজ লাইক বাড়ানোর জন্য এই অবজেক্টিভ সিলেক্ট করে অ্যাড  চালানো হয়ে থাকে। 

  • ইনভাইট 

ফেসবুকে এড যাওয়ার পরে অনেকেই এড এর সাথে লাইক, কমেন্ট বা শেয়ার করে এঙ্গেজ হলেও সবাই পেইজে লাইক দেয় না। পোস্ট পছন্দ আর পেজ পছন্দ এক বিষয় নয়।  

সে ক্ষেত্রে আপনি তাদেরকে ম্যানুয়ালি পেইজ লাইক দিতে ইনভাইট করতে পারেন।  

  • ভাইরাল কন্টেন্ট তৈরি করুন

ফেসবুকের কল্যাণে ইদানিং ভাইরাল শব্দটি আমাদের কাছে অত্যন্ত পরিচিত একটি শব্দ। হুটহাট করে ফেসবুকে অনেকেই ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে,  তারা কিভাবে ভাইরাল হচ্ছে?

ফেসবুকে যে কনটেন্টগুলো ভাইরাল হচ্ছে তা একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি এবং একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর অডিয়েন্সদের  টার্গেট করে বানানো। 

ভাইরাল হয়েছে তাই পছন্দ করছে বিষয়টি এমন নয়,  পছন্দ করে বলেই কনটেন্টটি ভাইরাল হয়েছে।

অনেকে সেটি পছন্দ করে তাদের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করছে যার ফলে সেই কনটেন্ট গুলো ফেসবুকে দুর্দান্ত ট্রাকশন  পাচ্ছে।

ভাইরাল কন্টেন্টের একটি বড় সুবিধা হচ্ছে, খুব অল্প পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে অথবা কখনো অর্থ ব্যয় না করেই ফেসবুকে বড় একটি অডিয়েন্স গ্রুপকে রিচ করা যায় এবং এঙ্গেজ করা যায়। 

ফেসবুকের কোন ধরনের অডিয়েন্স এই কন্টেন্ট গুলোর সাথে এঙ্গেজ হবে সেটি নির্ভর করছে কনটেন্টের কোয়ালিটির কেমন হবে তার উপর। 

  • দৃষ্টিনন্দন ক্রিয়েটিভ

ফেসবুক পোষ্টের কন্টেন্ট যদি সৃষ্টিশীল হয় এবং আপনার টার্গেট অডিয়েন্সদের নজর কাড়তে সক্ষম হয়, তবে আপনার পেজটিকে পছন্দ করার জন্য তারা বেছে নিবে।

বর্তমান সময়ে অনেকেই তাদের ফ্যান ফলোয়ার বাড়ানোর জন্য একটি চমৎকার সৃষ্টিশীল  কনটেন্ট  তৈরীর দিকে মনোযোগী হচ্ছে। কারণ, একটি পেজকে পছন্দনীয় করে তুলতে এটিই প্রধান উপকরণ । 

আপনাকে কাস্টমারদের কাছে পরিচিত হতে হলে অবশ্যই  তারা পছন্দ করে এমন কনটেন্ট গুলো সৃষ্টিশীল উপায় উপস্থাপন করতে হবে। 

  • ফেসবুক লাইভ

ফেসবুক লাইভ বর্তমান সময়ের ট্রেন্ড। সকল ব্র্যান্ড পেজ লাইভ এর মাধ্যমে তাদের প্রোডাক্ট এবং সার্ভিসকে প্রমোট করছে। 

ফেসবুকে ভিডিও কনটেন্ট এর জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি তাই অনেকেই লাইভকে বেছে নিচ্ছেন প্রমোশনের একটি অন্যতম উপায় হিসেবে।

লাইভ এর মাধ্যমে সরাসরি কাস্টমারদের সাথে যুক্ত থাকা যায় এবং তাদেরকে আপনার পেইজটি লাইক করার জন্য উৎসাহিত করা অনেক সহজ ।

  •  ইনফ্লুয়েন্সার

আপনি কি ফেসবুকে  সমসাময়িক সময়ে কিছু এডভারটাইজিং কৌশল খেয়াল করেছেন?  

যেমন, রিয়েলমি মোবাইল ফোন ব্র্যান্ড তাদের প্রোডাক্টের প্রমোশনের জন্য ফেইসবুক ইনফ্লুয়েন্সারদের শরণাপন্ন হয়েছে।

বেশ কিছু জনপ্রিয় ফেইসবুক ইন্টারটেইনার,  যেমন, কিটো ভাই,  আতিক ভাই  অথবা  শামস  থটস এর মতো  সোশ্যাল এন্টারটেইনারদের ব্যবহার করে রিয়েলমি তাদের টার্গেট অডিয়েন্সদের কাছে  পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। 

ইনফ্লুয়েন্সার ক্যাম্পেইনগুলো দেখুন,  

কিটো ভাইয়ের রিয়েলমি ক্যাম্পেইন

 

আতিক ভাইয়ের রিয়েলমি 6 রিভিউ

অন্যের পরিচিতি-কে ব্যবহার করে ফেসবুক পেজে ট্রাফিক নিয়ে এসে পেজ লাইক ও সেল বাড়াতে কাস্টোমারের কাছে পৌঁছানোর এটি একটি অন্যতম কৌশল।

  • ইমেইল মার্কেটিং

অনলাইন বিজনেস এর ক্ষেত্রে ইমেইল মার্কেটিং কার্যকরী একটি পন্থা। আপনি যখন ইমেইলের মাধ্যমে আপনার অডিয়েন্সের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য দিচ্ছেন তখন সেখানে আপনার ফেসবুক পেজের লিংকগুলো যুক্ত করে রাখুন।

এভাবে আপনার বিজনেস পেজ এর জন্য নতুন পেইজ লাইক নিয়ে আসতে পারেন। 

  • এসএমএস মার্কেটিং

এটি ইমেল মার্কেটিং এর মতই যেখানে আপনি একজন অডিয়েন্সকে সরাসরি তার  ফোনের মেসেজ ইনবক্সে  একটি তথ্য পৌঁছে দিতে সক্ষম হন।  

যদি আপনার কাছে কাস্টমারদের ফোন নাম্বারের লিস্ট থেকে থাকে তবে তাদের টার্গেট করে আপনার ফেসবুক পেইজটি লাইক করার জন্য একটি এসএমএস মার্কেটিং  ক্যাম্পেইন  চালাতে পারেন। 

কোন ধরনের পেজ লাইক আপনার প্রয়োজন আপনার জন্য আদর্শ

দৃষ্টিনন্দন ও সৃষ্টিশীল  কনটেন্ট তৈরি করলেন, পেইজ লাইক নিয়ে আসার জন্য অভিনব কৌশল অবলম্বন করলেন।

তাহলে কি আপনি আপনার বিজনেস পেজের জন্য আদর্শ অডিয়েন্স পাবেন?

এইখানে অধিকাংশ f-commerce ব্যবসায়ীরা যে ভুলটি করেন। সেটি হচ্ছে তারা শুধুমাত্র পেজ লাইক নিয়ে আসার দিকে মনোযোগী হন।

এটি একটি বড় রকম ভুল। 

আপনার প্রয়োজন বিজনেসের জন্য সঠিক এবং আদর্শ কাস্টমার যারা আপনার পেজের সাথে যুক্ত থাকবে এবং পরবর্তী সময়ে আপনার থেকে কেনাকাটা করবে। 

অনেকে মনে করেন পেজে লাইক  আসলেই হলো, কেউ কেউ প্যাকেজ পেইজ লাইক ও ফেক পেজ লাইকের ফাঁদে জড়িয়ে পড়েন।

তাতে তার পেজের লাইক সংখ্যা  হয়তো বাড়ে কিন্তু সেই পেজ লাইক কোনো কাজে আসে না।

একটি কাস্টমার গ্রুপ চিন্তা করুন, যারা রুচিশীল, সৌখিন এবং স্বচ্ছল।

পাশাপাশি দ্বিতীয় আরেকটি কাস্টমার গ্রুপ চিন্তা করুন, যাদের পছন্দ কম দামি প্রোডাক্ট, কাজ চললে হয় মানসিকতায় বিশ্বাসী এবং সীমিত আয়ের।

এখন আপনি দ্বিতীয় কাস্টমার গ্রুপের কাছে দামি  ও সৌখিন প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন দিলেন করলেন, তারা দেখবে, পছন্দ করবে, লাইক করবে কিন্তু কিনবে না।

আবার একইভাবে আপনি যদি প্রথম কাস্টমার গ্রুপের কাছে কমদামি বা এভারেজ প্রোডাক্ট এর বিজ্ঞাপন প্রচার করেন, তবে তারা হয়তোবা দেখবে কিন্তু সেটি পছন্দ করবে না এবং কখনোই কিনবে না।

একবার ভেবে দেখুন তো,  ফেসবুকে অনেক সময় আমাদের নিউজফিডে mercedes-benz কিংবা ল্যান্ড রোভার  গাড়ির আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন আসে।  

আমরা বিজ্ঞাপনগুলো দেখি, লাইক করি, শেয়ার করি কিন্তু একজন মধ্যম বা নিম্ন মায়ের মানুষের ক্ষেত্রে কি এই লাক্সারি গাড়ি কিনতে আদর্শ।  

যদি সেটা না হয় তবে আমাদের নিউজফিডে সেই বিজ্ঞাপনগুলো প্রচার করতে বিজ্ঞাপনদাতার যে খরচ হয়েছে তার বিপরীতে সেল নিয়ে আসতে কোন কাজে আসেনি। 

ফেসবুক পেইজের লাইক বাড়াতে গিয়ে আপনি ঠিক একই ভুল করছেন না তো?  

মনে রাখবেন, ভুল টার্গেটিং মানে ভুল অডিয়েন্স গ্রুপকে এঙ্গেজ করা। 

আর ভুল  টার্গেটিং এর মাধ্যমে  যে পেইজ লাইক আপনি নিয়ে আসছেন তা আপনার প্রোডাক্ট বিক্রির ক্ষেত্রে কোন কাজেই আসবে না। 

এক কথায় এটি অর্থের অপচয়।  

তাই পেইজ লাইক ক্যাম্পেইন চালানোর ক্ষেত্রে  টার্গেট কাস্টমারদের সম্পর্কে  গবেষণা করা আবশ্যক। 

বর্তমান সময়ে প্রফেশনাল সোশ্যাল মার্কেটিং কোম্পানি গুলো ফেইসবুক বিজ্ঞাপন দেয়ার ক্ষেত্রে কাস্টমারদের রিকোয়ারমেন্ট বুঝে সে মোতাবেক অডিয়েন্স টার্গেট করে।  

এই কাজটি করতে তারা বিভিন্ন ধরনের টুলস ও টেকনোলজি ব্যবহার করে থাকে। যা কাস্টমারদের ফেসবুক বিজ্ঞাপনের জন্য খরচ করা অর্থের বিপরীতে কাঙ্ক্ষিত সেলস নিশ্চিত করে। 

পরিশেষে,

পেইজ লাইক বেশি হবার মানে আপনার  বিজনেসের বেচাকেনা বেড়ে যাবে অথবা সবাই আপনার প্রোডাক্ট গুলো পছন্দ করবেন এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। 

আপনার  প্রোডাক্টের জন্য আদর্শ কাস্টমার গ্রুপ খুঁজে বের করে তাদেরকে বিভিন্ন কৌশলে আপনার  ফেসবুক বিজনেস পেজটির সাথে  এঙ্গেজ রাখা এবং এর মাধ্যমে তাদের মধ্যে প্রোডাক্ট কেনার  আকাঙ্ক্ষা তৈরি করতে হবে। 

তাদের কাছে সেল করতে হলে খুঁজে বের করতে হবে ঠিক কোন ধরনের  অডিয়েন্স আপনার জন্য আদর্শ।

আপনি যখন জানবেন কোন কাস্টমার গ্রুপ আপনার বিজনেসের জন্য আদর্শ তখন তাদের সঠিকভাবে টার্গেট করতে সক্ষম হবেন এবং তারা আপনার পেজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকবে।   

যাদের কাছে পরবর্তী সময়ে আপনার ফেইসবুক পেইজ দ্বারা কেনাবেচা  চালিয়ে যেতে পারবেন। 

আপনি আপনার ফেসবুক বিজনেস পেজের  পেজ লাইক ক্যাম্পেইনে চালানোর ক্ষেত্রে কিভাবে টার্গেট অডিয়েন্স নির্ধারণ করেন?  

ফেইসবুক পেইজ লাইক সংক্রান্ত আপনার জিজ্ঞাসা  ও মতামত  জানিয়ে কমেন্ট করুন। 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট

বিজনেসের জন্য ফেসবুক লাইভ (Facebook Live) গাইড:  কি, কেন, কীভাবে?

বিজনেসের জন্য ফেসবুক লাইভ (Facebook Live) গাইড: কি, কেন, কীভাবে?

শেয়ার করুনফেসবুক লাইভ (Facebook Live) কি? ফেসবুক লাইভ ফেসবুকের এমন একটি ফিচার যা একজন ইউজারকে তার বন্ধু, ফলোয়ার এবং পাবলিকদের...

একটি প্রফিটেবল ই-কমার্স বিজনেস শুরুর কমপ্লিট গাইডলাইন

একটি প্রফিটেবল ই-কমার্স বিজনেস শুরুর কমপ্লিট গাইডলাইন

শেয়ার করুনআপনি যদি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন বা আপনার বিশেষ কোনো স্কিল থাকে (যেমন – ছবি আঁকা, কাস্টম ড্রেস তৈরী...

ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা ২০২১ বিশ্লেষণ

ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা ২০২১ বিশ্লেষণ

শেয়ার করুনবাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রনালয় জাতীয় ডিজিটাল কমার্স(সংশোধিত) নীতিমালা ২০২০ এর পদক্রম অনুসারে ‘ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা ২০২১’ (Digital Commerce Operation...

আপনার মূল্যবান মতামত দিন

মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না। আবশ্যক ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত *

আগের মন্তব্য গুলো পড়ুন

User Avatar
Najmul Hossain 21st October 2020 07:25 am
ধন্যবাদ।
User Avatar
Rahim Bashar 13th October 2020 10:22 am
অসাধারণ