কাস্টমার কনভার্সন বৃদ্ধির জন্য সেলস ফানেল অপটিমাইজেশন স্ট্র্যাটেজি

শেয়ার করুন

২০২১ সালের এই সময়ে বিজনেস স্ট্র্যাটিজির জন্য সেলস ফানেল অপটিমাইজেশন অত্যাবশ্যক বিষয়। মার্কেটের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে একটি ব্র্যান্ডের সর্বোচ্চ কাস্টমার কনভার্সন রেট প্রয়োজন।  কিন্তু যে সময়ে আপনি একজন কাস্টমারকে এট্রাক্ট করার চেষ্টা করছেন সেসময়ে আপনার কম্পিটেটর ঠিক একই কাজ করছে। 

এমন একটি অবস্থায় আপনি যদি সেই কাস্টমারকে আপনার  বাকেটে নিয়ে আসতে চান  তবে আপনার বিজনেস এর সাথে এনগেজ হওয়া থেকে শুরু করে পারচেস করা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে আপনাকে সর্বোচ্চ  শ্রম দিতে হবে যাতে করে সেই কাস্টমার আপনার প্রতিযোগীর পরিবর্তে আপনাকে আদর্শ অপশন হিসেবে বেছে নেয়। 

এই কাজটি এতটা সহজ বিষয় নয় যতটা সহজ আমরা মনে করি। যদি একজন  উদ্যোক্তা অথবা মার্কেটিং স্ট্রাটেজিস্ট সেলস ফানেল তৈরি করে তার প্রতিটি  স্টেজে  কাস্টমারদের জন্য  ভ্যালু ক্রিয়েট করতে সক্ষম হোন, তবে নিঃসন্দেহে তিনি এই প্রতিযোগিতায় জিতে যাবেন।   

সেলস ফানেল সম্পর্কে আমরা বুঝি, একজন কাস্টমারকে আপনার বিজনেসের সাথে  ইনভল্ভ করা থাকে শুরু করে তাকে ক্লায়েন্টে পরিণত করা পর্যন্ত তার আচরণের উপর নির্ভর করে তৈরি স্টেজগুলোকে। 

একজন ক্রেতা সেলস ফানেলের স্টেজগুলো ধাপে ধাপে পার হবার পরে ফাইনাল গুডস বা প্রোডাক্টটি পারচেস করে।প্রতিটি স্টেজে তাদের সংযুক্ত হবার ধরন ভিন্ন। প্রাথমিক সেলস ফানেল ৩ টি স্টেজে বিভক্ত। 

Top of the funnel, Middle of the funnel, Bottom of the funnel

আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে আরো বিস্তারিত উপায়ে কাস্টমারদের বায়িং প্রসেস ব্যাখ্যার জন্য এই সেলস ফানেল স্টেজকে আরো বেশি ভাগে ভাগ করে থাকেন। 

এই সেলস ফানেলকে পাঁচটি স্টেজে ভাগ করা হয়েছে, 

১। অ্যাওয়ারনেসঃ এই স্টেজে একজন কাস্টোমার আপনার ব্র্যান্ড সম্পর্কে প্রথম জানে।  এটি হতে পারে অর্গানিক সার্চ পেইড অ্যাপ রেফারেল প্রোগ্রাম বিভিন্ন মাধ্যম থেকে।এটি টপ অফ দা ফানেল।  

২। কনসিডারেশনঃ এই স্টেজে একজন কাস্টোমার আপনার প্রোডাক্ট সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে ওঠে ।  সে তার পছন্দের প্রোডাক্ট গুলোর মধ্যে আপনার  প্রোডাক্ট গুলোকে স্থান দেয়।  এবং এই স্টেজে তারা প্রোডাক্ট সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য কাস্টমার রিভিউ এসকল বিষয়গুলো জানতে চাই।  এটি মিডিল অফ দা ফানেল। 

৩। ডিসিশনঃ এই স্টেজে একজন কাস্টোমার আপনার প্রোডাক্ট কেনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।  এবং কেনাকাটা সম্পন্ন করার লক্ষে তার কনসিডারেশন এর মধ্যে যে সকল প্রোডাক্ট রয়েছে তাদের মধ্যে তুলনামূলক পার্থক্য করে।  এবং সেখান থেকে তার জন্য আদর্শ প্রোডাক্টটি সে বেছে নেয়। 

৪। পারচেসঃ এই  স্টেজে কাস্টমার প্রোডাক্টটি ফাইনালি পারচেস করে। সে তার জন্য মূল্য পরিশোধ করে।এইটি বোটম অব দ্যা ফানেল। 

৫। রিটেনশনঃ এই স্টেজে কাস্টমার আপনার প্রোডাক্ট টি ব্যবহার করে সন্তুষ্ট হয় এবং পরবর্তী কেনাকাটার জন্য আপনার কাছে আবার ফিরে আসে। 

এই পাঁচটি স্টেজে একজন কাস্টমার কোন একটি ব্র্যান্ডের সাথে যুক্ত হয়ে কেনাকাটা সম্পন্ন করে এবং পরবর্তী কেনাকাটার জন্য আবার ফিরে আসে।  এখন সেই ব্র্যান্ড যদি মনে করে তার সেলস নাম্বার বৃদ্ধি করতে হবে, তাহলে তাকে প্রতিটি স্টেজে কিছু অপটিমাইজেশন করার মাধ্যমে আরো বেশি কাস্টমার ফিল্টার করে ফাইনাল ক্লায়েন্টে পরিণত করতে হবে। 

সেলস ফানেলের এই স্টেজ গুলোতে একজন উদ্যোক্তা এমন কি করতে পারে, যার ফলে তার অ্যাভারেজ সেলস নাম্বার আগের তুলনায় বেড়ে যাবে? 

অ্যাওয়ারনেস স্টেজ অপটিমাইজেশন

এই স্টেজ একটি ব্র্যান্ডের জন্য প্রাইমারি গেইট। আপনি যত বেশি পটেনশিয়াল ট্রাফিক  এই স্টেজে যুক্ত করতে পারবেন,  ততবেশি সেলস নাম্বার বাড়ার সম্ভাবনা থাকবে। কিন্তু অ্যাওয়ারনেস স্টেইজে বেশি পরিমাণ ট্রাফিক নিয়ে আসা একটি চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার।  এই চ্যালেঞ্জকে ফেস করতে হলে আপনাকে কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে।

আপনি লুকালাইক কাস্টমার তৈরি করার মাধ্যমে আরও বেশি সিমিলার অডিয়েন্স আপনি নিয়ে আসতে পারেন।  ফেসবুক বিজ্ঞাপন এর ক্ষেত্রে লুকালাইক অডিয়েন্স ক্রিয়েট করার জন্য তিনটি সহজ ও দুর্দান্ত কার্যকরী উপায় রয়েছে সেগুলো হচ্ছে,

কাস্টমারদের ইমেইল লিস্টের মাধ্যমে লুকালাইক অডিয়েন্স তৈরি করা

যে সকল কাস্টমার আপনার ব্র্যান্ড থেকে কেনাকাটা করছে বিশেষ করে ওয়েবসাইট ব্যবহার করে কেনাকাটা করছে তাদের ইমেইল লিস্ট আপনার কাছে রয়েছে। সেসকল ইমেইল লিস্টগুলো ব্যবহার করে আপনি যদি লুকালাইক অডিয়েন্স তৈরি করেন তাহলে একই ধরনের সম্ভাব্য অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছানোর সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। 

রিসেন্টলি যেসকল কাস্টমার ক্লাইন্টে কনভার্ট হয়েছে তাদের ডাটা গুলো ব্যবহার করে লুকালাইক অডিয়েন্স তৈরি করা

যারা আপনার ব্র্যান্ড থেকে কেনাকাটা করছে তারা আপনার বিজনেসের জন্য সবচেয়ে পোটেনশিয়াল অডিয়েন্স গ্রুপ। এমন অবস্থায় আপনি যদি কনভার্ট হওয়া কাস্টমারদের ডাটা ব্যবহার করে লুকালাইক অডিয়েন্স তৈরি করেন তবে আপনি সবচেয়ে আদর্শ অডিয়েন্স গ্রুপের কাছে পৌঁছাতে পারবেন।  

এক্ষেত্রে ফেসবুক তাদের কাছে আপনার প্রোডাক্টের অ্যাড গুলো পৌছে দেয়, যাদের এট্রিবিউট গুলো আপনার ক্লায়েন্টদের সাথে ম্যাচ করে। 

কনটেন্টের সাথে এঙ্গেজ হচ্ছে এমন কাস্টমারদের ওপর নির্ভর করে লুক লাইক অডিয়েন্স তৈরি করা 

আপনার ব্র্যান্ডের যে কনটেন্টগুলো অডিয়েন্স দেখছে সেসকল কনটেন্ট গুলো ওপর নির্ভর করে লুকালাইক অডিয়েন্স তৈরি করতে পারেন।  এটিও আপনাকে আপনার ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট গুলোর জন্য সম্ভাব্য পটেনশিয়াল অডিয়েন্স গ্রুপের কাছে নিয়ে যেতে সক্ষম।

কাস্টমারদের কুইরির ওপর নির্ভর করে গুগোল শপিং এর প্রোডাক্টগুলো অপটিমাইজ করুন । যেমনটি নিচের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, খেয়াল করুন কাস্টমার গুগলে সার্চ করেছে “ট্রাভেল ব্যাগপ্যাক” এই শব্দটি লিখে এবং সেই সকল সেলারদের প্রোডাক্টগুলো সামনে আসছে যারা তাদের এই প্রোডাক্টগুলো অপটিমাইজ করেছিলো “ট্রাভেল ব্যাগপ্যাক” এই কী-ওয়ার্ডটির  জন্য।  

Google Shopping results for backpack search

 ই-কমার্স বিজনেসের জন্য কিওয়ার্ড অপটিমাইজেশন অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং কার্যকরী একটি পদ্ধতি যেটি সার্চ রেজাল্টে সব সময় আপনাকে সবার থেকে এগিয়ে রাখবে। 

রেফারেল প্রোগ্রাম

গ্রোথ মার্কেটিং হ্যাক সারা বিশ্বে জনপ্রিয় একটি মার্কেটিং ক্যাম্পেইন কৌশল। এই পদ্ধতিতে একজন ক্রেতা যখন অন্য ক্রেতাকে একটি প্রোডাক্ট রেফার করে, তখন তার রেফার করা প্রোডাক্ট কেউ কিনলে এর বিপরীতে তিনি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে মূল্য ছাড় পান। 

অ্যাওয়ারনেস স্টেজে নতুন একটি প্রোডাক্ট বা সার্ভিস সেল করার জন্য রেফারেল প্রোগ্রাম ব্যবহার করা হলে কাস্টমার চেষ্টা করে যতটা সম্ভব তার প্রথম পারচেস এক্সপিরিয়েন্সের জন্য খরচ কমিয়ে আনতে, তাই সে স্বপ্রণোদিত হয়ে তার পরিচিত বন্ধুদের মাঝে প্রোডাক্ট রেফার করে যা প্রোডাক্ট অ্যাওয়ারনেস বাড়িয়ে তোলে। 

কনসিডারেশন স্টেজ অপটিমাইজেশন

প্রথমেই বলেছি এই স্টেজে একজন ক্রেতা কোন একটি ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট তার পরবর্তী কেনাকাটার জন্য ক্রয় সিদ্ধান্তের মধ্যে নিয়ে আসে। এই সময়ে আপনি যদি চান  সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের ক্রয় সিদ্ধান্তের মধ্যে আপনার প্রোডাক্টকে নিয়ে আসতে, তাহলে আপনার প্রোডাক্টের অথরিটি তৈরি করতে হবে, একই সাথে কাস্টমারদের আস্থা অর্জন করতে হবে। সে জন্য আপনি যা যা করতে পারেন,  

ইউজার জেনারেটেড কনটেন্ট

বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়া নির্ভর মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে ইউজার জেনারেটেড কনটেন্ট আপনার সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মের রিচ এবং এনগেজমেন্ট বাড়াতে সবচেয়ে কার্যকরী একটি পদ্ধতি। এর কারণ হচ্ছে, সামাজিক মাধ্যমগুলো বিশেষ করে ফেসবুক দেখে আপনার ব্র্যান্ডে সম্পর্কে অন্য মানুষেরা কি বলছে এবং যত বেশি আপনার ব্র্যান্ড নিয়ে অডিয়েন্স কথা বলবে আপনার ব্র্যান্ড পেইজটি সামাজিক মাধ্যমে ততবেশি ট্রাকশন পাবে।

আর এখানেই ইউজার জেনারেটেড কনটেন্ট এর সফলতা। যেখানে একজন হ্যাপি কাস্টমার আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিস নিয়ে তার অভিজ্ঞতা অথবা মতামত সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম গুলোতে শেয়ার করে। 

এতে করে অন্যান্য অডিয়েন্স জানতে পারে একজন সত্যিকার গ্রাহক আপনার প্রোডাক্ট নিয়ে কি ধরনের চিন্তা পোষণ করছে। এটি সেই প্রোডাক্টটিকে তার বায়িং কনসিডারেশনর মধ্যে নিয়ে আসার জন্য কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। 

ইউজার জেনারেটেড কনটেন্ট নিয়ে আরো পড়ুন:

 UGC Campaign: বিনা খরচে বিজনেসের সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং

ভিভিও দেখতে ক্লিক করুনঃ

 Share A Coke India: Celebrating relationships!

বেনিফিট ড্রিভেন প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশন

প্রোডাক্টটি আপনি কিভাবে তৈরি করেছেন অথবা এই প্রোডাক্টটি কত বেশি কোয়ালিটি সম্পন্ন তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আপনার প্রোডাক্ট একজন কাস্টমারের কেন প্রয়োজন। অর্থাৎ কাস্টমার জানতে চায় প্রোডাক্টের বেনিফিট। 

যখন প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশন লিখছেন তখন শুধুমাত্র ম্যাটেরিয়াল অথবা মেকিং প্রসেস উল্লেখ না করে বলুন প্রোডাক্টটি একজন কাস্টমারকে কি বেনিফিট প্রদান করবে।  

কনসিডারেশন স্টেজে একজন কাস্টমার তার পছন্দের সবগুলো অল্টারনেটিভ প্রোডাক্টের মধ্যে সেই প্রোডাক্টটি খুঁজে পেতে চায় যেটি তার সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম। আর আপনি যখন প্রোডাক্টের বেনিফিট গুলো বর্ণনা করার মাধ্যমে কাস্টমারের সমস্যার সমাধান করতে সহায়তা করবেন, তখন কাস্টমার আপনাকে গ্রহন করবে। 

প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশন নিয়ে আরো পড়ুন,

সফল ই-কমার্স বেচাকেনায় মনকাড়া প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশন লেখার নিয়ম

ডিসিশন স্টেজ অপটিমাইজেশন

এই স্টেজে এসে কাস্টমার ফাইনালি তার  পছন্দের প্রোডাক্টটি কেনার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।  খেয়াল রাখবেন যে একজন কাস্টমার সুনির্দিষ্টভাবে জানে সে কি কিনতে চলেছে।  আর সেই জন্য ডিসিশন স্টেজে আপনাকে কাস্টমারের বায়িং প্রসেস স্মুথ করতে হবে এবং আপনি কিভাবে সেটি করতে পারেন

কাস্টমার সার্ভিস

আপনাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে কাস্টমার সার্ভিস ও কাস্টমার কেয়ারে।  কাস্টমার যখন আপনার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম গুলোতে মেসেজ দিচ্ছে সে গুলোকে গুরুত্বের সাথে রিপ্লাই করুন,  জানতে চান তার প্রয়োজন সম্পর্কে।  প্রোডাক্ট ও সার্ভিস নিয়ে তাকে আরো বেশি তথ্য প্রদান করুন।  কিভাবে কেনাকাটা সম্পন্ন করবে অথবা  আপনাদের রিটার্ন পলিসি, ডেলিভারি পলিসি এই সকল বিষয়গুলো নিয়ে তার সাথে আলোচনা করুন। সাধারণত ডিসিশন ষ্টেজে কাস্টমার প্রোডাক্ট কোয়ালিটি, এক্সপেরিয়েন্স এবং ট্রানজেকশন সিকিউরিটি তিনটি বিষয়কে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়।  

আপনি যত বেশি তাদের এই সকল ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবেন তত বেশি তাদের  কেনাকাটা করার সম্ভাবনা বেশি থাকবে।

এক্সিট ইন্টেন্ট স্ট্র্যাটেজি

এই  কৌশলটি ই-কমার্স সেলারদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি কৌশল।  কিন্তু লক্ষ্য করা গেছে অধিকাংশ ই-কমার্সের আর এই কৌশলটিকে একেবারেই পাত্তা দেন না। ফলাফল তারা পটেনশিয়াল কাস্টমার গ্রুপকে হারিয়ে ফেলেন।  

এতে করে দিনের পর দিন তাদের মার্কেটিং খরচ বাড়তে থাকে। এক্সিট ইন্টেন্ট স্ট্র্যাটেজি দুই ভাবে আপনাকে সাহায্য করে। প্রথমত কাস্টমারদের কেনাকাটার জন্য ট্রিগার করে, দ্বিতীয়তঃ যদি সে কেনাকাটা সম্পূর্ণ না করে চলে যায় তবুও তাকে এনগেজ রাখা সম্ভব হয়।

উদাহরণ হিসেবে নিচের চিত্রটি দেখুন, 

exit intent pop-up example

 

এখানে বলছে ইমেইল লিস্টে জয়েন করলে প্রথম কেনাকাটায় ২০ % মূল্যছাড় এখন কেউ যদি ডিসিশন নিয়ে থাকে সে আপনার প্রোডাক্টটি কিনবেন, সে ক্ষেত্রে এই মেইল লিস্টে জয়েন করলে ইনস্ট্যান্ট ২০%  ছাড় পেয়ে যাচ্ছে।  এটি তাকে আরও দ্রুত পারচেস প্রসেস সম্পন্ন করতে ট্রিগার করবে।  

এবার ধরুন, সে কেনাকাটা না করেই চলে গেলো এবং যাবার সময় সে ইমেইল সাবস্ক্রাইব করে গেল, কারণ সে চায় পরবর্তী সময়ে প্রথমবার যখন কিনবে তখন যেন 20% ছাড় পায়।  

একবার যখন তার  ইমেইল এড্রেসটি পেয়ে গেছেন তাকে নিয়মিত ইমেইল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে এঙ্গেজ রাখতে পারবেন। নতুন নতুন প্রোডাক্ট দেখাতে পারবেন।  আর যখনই সঠিক সময়ে সঠিক প্রোডাক্টটি তার সামনে আসবে কাস্টমার সেটি কিনবে। 

পারচেস স্টেজ অপটিমাইজেশন

পারচেস স্টেজে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কাস্টমারদের অর্ডার গিভিং প্রসেস অথবা পেমেন্ট প্রসেসটিকে সম্পন্ন করানো। দেখা গেছে প্রায় 21 শতাংশ কাস্টমার  check-out প্রসেস সম্পন্ন হতে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার জন্য কেনাকাটা সম্পূর্ণ না করেই চলে গেছে।  

বিশেষ করে ওয়েবসাইট লোডিং এর একটি অন্যতম কারণ।  আবার প্রায় 50% কাস্টমার হিডেন চার্জ অর্থাৎ ডেলিভারি  চার্জ, ভ্যাট ও ট্যাক্স এর কারণে কেনাকাটা সম্পন্ন না করেই শপিং কার্ট ছেড়ে চলে গেছে।

আপনাকে ট্র্যাক করতে হবে কারা কারা চেক আউট স্টেজ থেকে আপনার ওয়েবসাইটটি ছেড়ে গেছে অথবা সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষেত্রে মেসেজে কানেক্ট হওয়ার পরেও কেনাকাটা সম্পন্ন না করে চলে গেছে।  তাদের জন্য সবচেয়ে কার্যকরী কৌশল হচ্ছে ফ্রী দেলিভেরি বা  ডিসকাউন্ট যা তাদের চেক আউট প্রসেস সম্পন্ন করতে উৎসাহিত করবে।

 

রিটেনশন স্টেজ অপটিমাইজেশন

কাস্টমার প্রথমবারের জন্য আপনার ব্র্যান্ড পেজ থেকে কেনাকাটা সম্পন্ন করেছে কিন্তু যদি তাদেরকে দ্বিতীয়বার ফেরত নিয়ে আসতে না পারেন তবে আপনার মার্কেটিং খরচ বাড়তে থাকবে প্রফিট কমতে থাকবে।  

কারণ ফাস্ট টাইম কাস্টমারদের চেয়ে সেকেন্ড টাইম কাস্টমারদের কাছে বেচাকেনা করা অধিক বেশি লাভজনক।  এই  স্টেজে এসে কাস্টমার রিটেনশন রেট  বাড়াতে  আপনি যা করতে পারেন।  

কাস্টমার একাউন্ট ক্রিয়েট করার জন্য উৎসাহিত করুন

কেনাকাটা সম্পন্ন করার পরে কাস্টমারদের উৎসাহিত করুন আপনার ই-কমার্স ওয়েবসাইটে তার কাস্টমার অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে যেখানে তার সকল অর্ডার হিস্টরি থাকবে। কাস্টমার একাউন্ট এর উদ্দেশ্য হচ্ছে কাস্টমার পারচেস প্যাটার্ন ট্র্যাক করার মাধ্যমে  লয়াল কাস্টমার খুঁজে পাওয়া।  

একটি বিজনেসের দীর্ঘমেয়াদি সফলতা নির্ভর করে রিপিট কাস্টমারদের উপরে। ফার্স্ট টাইম কাস্টমার সংখ্যা যতই বেশি হোক সেটি বিজনেসের সাকসেস ইন্ডিকেটর কখনোই নয়। 

যখন কাস্টমার আপনার ওয়েবসাইটে একাউন্ট তৈরি করবে তখন তার সমস্ত পারচেস হিস্টরি আপনি পাচ্ছেন। তার পারচেস প্যাটার্ন পর্যবেক্ষণ করে তাকে বেশি বেশি অফার, ডিসকাউন্ট বা কুপন দেবার মাধ্যমে কাস্টমার লাইফটাইম ভ্যালু (CLV)  বাড়িয়ে তুলতে সক্ষম হবেন। 

কাস্টমার লাইফটাইম ভ্যালু (CLV) বিষয়ে আরো পড়ুনঃ

কাস্টমার লাইফটাইম ভ্যালু (CLV) কী? এটি কেন গুরুত্বপূর্ণ এবং কিভাবে ক্যালকুলেট করতে হয়?

 

 আপসেল -ক্রসসেল

আপনি কি শুধুমাত্র একটি প্রোডাক্ট কেনাবেচা করেন নাকি আরো প্রোডাক্ট আপনার রয়েছে?  আপনার কাস্টমার কি শুধু একটি প্রোডাক্ট কেনাকাটা করে সন্তুষ্ট নাকি তার আরো অনেক ধরনের প্রোডাক্টের প্রয়োজন?  নিশ্চয়ই তার আরো অনেক ধরনের প্রোডাক্ট এর চাহিদা রয়েছে।

যে কাস্টমার আপনার থেকে বিউটি শোপ কিনেছে তার কাছে আপনি প্রিমিয়াম কোয়ালিটির বিউটি শোপ বিক্রি করুন। যে আপনার থেকে ৫০ মিলি লিটার শ্যাম্পুর বোতল কিনেছে তার কাছে আপনি ২৫০ মিলি শ্যাম্পুর বোতল বিক্রি করুন।  এটিকে বলা হয় আপসেল। 

এখন একই কাস্টমার যে আপনার কাছ থেকে বিউটি সোপ কিনছে তার কাছে ড্রাই ফুড বিক্রি করুন,  তার কাছে হাউজহোল্ড এক্সেসরিজ বিক্রি করুন এটিকে বলা হয় ক্রসসেল।

কাস্টমার রিটেনশন স্টেজে এই আপসেল – ক্রসসেল স্ট্র্যাটেজি আপনার রেভিনিউয়ের পরিমাণকে বাড়িয়ে তুলবে কাস্টমার লাইফটাইম ভ্যালু বাড়ানোর মাধ্যম দিয়ে। 

পরিশেষে

সেলস ফানেল তৈরি করেই আপনার কাজ শেষ হয়ে যায় না, আপনাকে প্রতিনিয়ত সেটি আপডেট করতে হবে। নিত্যনতুন কৌশল ইম্প্লেমেন্ট করার মাধ্যম দিয়ে প্রতিটি স্টেজে সর্বোচ্চ আউটপুট নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে টপ অফ দা ফানেলে যত বেশি ইনপুট দেওয়া হবে, বোটম অফ দা ফানেলে ততবেশি আউটপুট হিসেবে কাস্টমার কনভার্সন বাড়বে। কিন্তু মাঝের যেসকল স্টেজগুলো রয়েছে সেই সকল স্টেজে তাদেরকে কিভাবে আপনি নারচার করছেন সেটি গুরুত্বপূর্ণ। 

কাস্টমার যেকোন সময় যে কোন স্টেজ থেকে আপনাকে ছেড়ে চলে যেতে পারেন, তাকে ধরে রাখার দায়িত্ব আপনার। 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট

বিজনেসের জন্য ফেসবুক লাইভ (Facebook Live) গাইড:  কি, কেন, কীভাবে?

বিজনেসের জন্য ফেসবুক লাইভ (Facebook Live) গাইড: কি, কেন, কীভাবে?

শেয়ার করুনফেসবুক লাইভ (Facebook Live) কি? ফেসবুক লাইভ ফেসবুকের এমন একটি ফিচার যা একজন ইউজারকে তার বন্ধু, ফলোয়ার এবং পাবলিকদের...

ই কমার্স সেল বাড়াতে পারসুয়েসিভ প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশন লিখার টেকনিক 

ই কমার্স সেল বাড়াতে পারসুয়েসিভ প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশন লিখার টেকনিক 

শেয়ার করুনযেকোনো ই -কমার্স বিজনেসের সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি হচ্ছে কাস্টমারদেরকে প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস পারচেজ করার জন্য কনভিন্স করা। এক্ষেত্রে...

কল টু অ্যাকশন (CTA): আরো বেশি কাস্টমার  কনভার্শনের সিক্রেট

কল টু অ্যাকশন (CTA): আরো বেশি কাস্টমার কনভার্শনের সিক্রেট

শেয়ার করুনআপনার ওয়েবসাইটের ভিজিটর শপিংকার্টে কেন প্রোডাক্ট অ্যাড (যোগ) করছে না? আপনার ওয়েবসাইটে প্রতিদিন হাজার হাজার ট্রাফিক কিন্তু তারা কেউ...

আপনার মূল্যবান মতামত দিন

মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না। আবশ্যক ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত *

আগের মন্তব্য গুলো পড়ুন

সবার আগে মন্তব্য করুন