কীভাবে একটি ই-কমার্স বিজনেস শুরু করার জন্য প্ল্যান করবেন

শেয়ার করুন

আপনি কি ই-কমার্স বিজনেস শুরু করার কথা ভাবছেন? তাহলে আপনাকে জানতে হবে, কিভাবে একটি ই-কমার্স বিজনেসের জন্য প্ল্যান করবেন।

অধিকাংশ উদ্যোক্তা ই-কমার্স বিজনেস শুরু করার প্রক্রিয়াকে অনেক বেশি জটিল করে ফেলেন, এতে করে বিজনেস শুরু করার আগেই তারা হতাশায় ভোগেন।

আবার কিছু উদ্যোক্তা ই-কমার্স বিজনেস শুরু করার জন্য বিজনেস প্ল্যানিং এড়িয়ে যান, ফলে বিজনেস শুরু করার পরে তারা খুব বেশিদূর এগোতে পারে না।

আজকের গাইডে একটি ই-কমার্স বিজনেস শুরু করার জন্য কিভাবে প্ল্যান তৈরি করতে হয় সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। 

ই-কমার্স বিজনেস প্ল্যান কি?

ই-কমার্স বিজনেস প্ল্যান বোঝার আগে আমাদের জানতে হবে প্ল্যান বা পরিকল্পনার সংজ্ঞা। Thinking before doing অর্থাৎ কোন কিছু করার আগে সে সম্পর্কে চিন্তা করাকেই প্ল্যান বা পরিকল্পনা বলে।

ই-কমার্স বিজনেস প্ল্যান হচ্ছে, একটি প্রতিষ্ঠানের সেই সকল স্ট্র্যাটেজিক ডকুমেন্ট যা প্রতিষ্ঠানের বিজনেস পরিচালনার জন্য তৈরি করা হয়। 

এই স্ট্র্যাটেজিক ডকুমেন্টগুলো বিজনেসের সুস্পষ্ট লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়তা করে ও বিজনেসের ভবিষ্যৎ সমস্যাগুলো অগ্রিম সমাধানের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে ভূমিকা রাখে।

ই-কমার্স বিজনেস প্ল্যান ও ট্র্যাডিশনাল বিজনেস প্ল্যানের মধ্যে পার্থক্য কি? 

ই-কমার্স বিজনেস এবং ট্র্যাডিশনাল বিজনেসের মধ্যে মূল পার্থক্যটি হচ্ছে বিজনেস অপারেশন মিডিয়া।

একটি ট্রাডিশনাল বিজনেস পরিচালনা করতে ফিজিক্যাল শপের প্রয়োজন হয়। কাস্টমার সেখানে স্বশরীরে উপস্থিত থাকে এবং ফেস টু ফেস বা ডিরেক্ট কমিউনিকেশনের মাধ্যমে বেচাকেনা সম্পন্ন হয়।

কিন্তু ই-কমার্স বিজনেসে কাস্টমার ভার্চুয়াল শপের সাথে কমিউনিকেট করে এবং একটি প্রোডাক্ট ফিজিক্যালি দেখার আগেই সেটি অর্ডার করে।

ট্রাডিশনাল বিজনেসের সাথে ই-কমার্স বিজনেসের কমিউনিকেশন এবং প্রেজেন্টেশনের কৌশলগত জায়গায় মূল পার্থক্য তৈরি হয়।

কিভাবে ই-কমার্স বিজনেসের জন্য প্ল্যান করবেন

মনে করুন, আপনি সম্পূর্ণ নতুন একজন উদ্যোক্তা এবং আপনি ই-কমার্স বিজনেস শুরু করতে চান। তাহলে আপনাকে পর্যায়ক্রমিকভাবে যে বিষয়গুলো নিয়ে প্ল্যান তৈরি করা জরুরি –

  • মার্কেট রিসার্চ
  • এক্সিকিউটিভ সামারি
  • টেকনোলজিক্যাল প্ল্যান
  • মার্কেটিং প্ল্যান
  • অপারেশন প্ল্যান

১) মার্কেট রিসার্চ

আপনি যদি আপনার ইন্ডাস্ট্রির অডিয়েন্সদের সম্পর্কে না জানেন তবে বিজনেসে ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। তাই মার্কেট রিসার্চ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং এখানেই ট্র্যাডিশনাল বিজনেস এবং ই কমার্স বিজনেসের মধ্যে একটি বড় পার্থক্য রয়েছে।

বিজনেস শুরুর আগে জানুন,

  • আমার কাস্টমারদের কি ধরনের সমস্যা রয়েছে?
  • আপনি কীভাবে এই সমস্যাগুলি সমাধান করতে পারেন?
  • কোন প্রোডাক্টগুলো এই সমস্যাগুলি সমাধান করতে সক্ষম?
  • মানুষ কখন এই প্রোডাক্টগুলো কেনাকাটা করে?
  • তারা কতবার প্রোডাক্টগুলো কেনে?

২) এক্সিকিউটিভ সামারি

প্রতিটি বিজনেসের এমন একটি প্ল্যান থাকা উচিত যা প্রতিষ্ঠানের মিশন এবং ভিশনের স্পষ্ট রূপরেখা দেয়। এক্সিকিউটিভ সামারি এই কাজটি করে, তাই এটি বিজনেস প্ল্যানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। 

এক্সিকিউটিভ সামারি আপনার বিজনেসের সাধারণ পরিচিতির চেয়ে আরো বেশি কিছু। এটি আপনার বিজনেস প্ল্যানের  একমাত্র অংশ যা আপনার কাস্টমারেরা পড়তে পারে। তাই এটি চিন্তাশীল এবং স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন।

এক্সিকিউটিভ সামারি  কীভাবে লিখতে হয় এবং এর মধ্যে কী কী অন্তর্ভুক্ত করা যায়? 

  • অবজেক্টিভ, মিশন ও ভিশন
  • টার্গেট মার্কেট
  • প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস
  • বিপণন ও বিক্রয় কৌশল
  • প্রতিযোগিতামূলক বিশ্লেষণ
  • অর্থায়ন এবং বাজেট বরাদ্দ
  • কর্মী নিয়োগ ও কর্মচারী সংক্রান্ত তথ্য
  • বিজনেস প্ল্যান কীভাবে কার্যকর করা হবে

নিচের লিংকটি ব্যবহার করে আপনার বিজনেসের জন্য এক্সিকিউটিভ সামারি তৈরি করতে পারেন, 

https://www.hubspot.com/business-templates/executive-summary 

৩) টেকনোলজিক্যাল প্ল্যান

দীর্ঘ মেয়াদে বিজনেস করতে হলে প্রথমেই ভেবে নেয়া প্রয়োজন ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য কি ধরনের টেকনোলজি ব্যবহার করবেন। 

ই-কমার্সের জন্য সঠিক টেকনোলোজি নির্বাচনে ভুল করা উদ্বেগজনক, কারণ পেজ লোডিং এর জন্য এক সেকেন্ড বেশি সময় নিলে আপনার রেভিনিউ হারিয়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। তাই সঠিক টেকনোলোজি নির্বাচন প্রোডাক্ট অংশের মতই সমান গুরুত্বপূর্ণ।

ই-কমার্স ওয়েবসাইটের দুটি ভিন্ন অংশ থাকে, 

  1. Front end (client-facing)
  2. Back end (server-facing)

Front-End eCommerce Technologies

Front end ওয়েব এবং অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টের প্রযুক্তি একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইটকে কাস্টমারদের ব্যবহার উপযোগী করার জন্য প্রয়োগ করা হয়। এখানে তিনটি প্রধান প্রযুক্তি রয়েছে যা সর্বদা একে অপরের পাশাপাশি ব্যবহৃত হয়, সেগুলো হচ্ছে, 

  • HTML 
  • CSS 
  • Java Script

Back-End eCommerce Technologies

প্রযুক্তির সার্ভার -মুখী অংশ যা ব্যাক এন্ড নামে পরিচিত। ই কমার্স ওয়েবসাইটের সকল কাজগুলি সম্পাদন করার জন্য প্রয়োজনীয় টুলস এবং ফ্রেমওয়ার্কের একটি সম্মিলিত প্রয়োগ। 

Back-End eCommerce Technologies এর মধ্যে যে সকল অংশ রয়েছে,

Operating systems

প্রধান ৪ ধরনের Operating systems রয়েছে,

  1. Google’s Android 
  2. Microsoft Windows
  3. Apple macOS
  4. Linux OS 

আপনার বাজেট ও বিজনেসসের পরিধি ও প্রয়োজনীয়তা অনুসারে সঠিক Operating systems বেছে নিতে হবে। 

Web Server

ওয়েব সার্ভার এমন একটি সফটওয়্যার যা ব্যবহারকারীদের অনুরোধ গ্রহণ করে সেটি বিশ্লেষণ করে এবং ব্যবহারকারীর অনুরোধ করা নথিগুলির আউটপুট সরবরাহ করে। দুটি বড় ওয়েব সার্ভার যা উভয়ই ওপেন সোর্স এবং ফ্রি সেগুলো হচ্ছে, Apache and Nginx

Databases

ডাটাবেসগুলি ব্যাকেন্ড ইকোসিস্টেমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা আপনাকে প্রচুর ডেটা রাখতে এবং প্রসেস করতে দেয়। সর্বাধিক জনপ্রিয় ডাটাবেসগুলি হচ্ছে,

  • MySQL
  • MongoDB
  • DynamoDB by Amazon
  • Firebase database by Google
  • PostgreSQL

Storage

সর্বাধিক জনপ্রিয় স্টোরেজ সমাধানগুলি হচ্ছে, 

  • AWS S3 Amazon Simple Storage Solution
  • Digital Ocean Space
  • Firebase Storage by Google

Programming language

প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ হলো শব্দভাণ্ডার এবং নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদনের জন্য কম্পিউটার বা কম্পিউটিং ডিভাইসকে নির্দেশ দেওয়ার জন্য ব্যাকরণ সংক্রান্ত নিয়মের সেট। 

  • Ruby [Ruby on Rails]
  • Java [Spring]
  • Python [Django, Pylons, Flask]
  • Scala [Play]
  • PHP [Laravel]

ইকমার্সের জন্য কিভাবে একটি সঠিক টেকনোলোজি স্ট্যাক বা সেট নির্বাচন করবেন,

  • এটি বিদ্যমান টেকনোলোজি স্ট্যাক বা সেটের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ তা নিশ্চিত করুন 
  • আপনি কি বিষয়ে দক্ষ সেটি বের করুন
  • প্রোজেক্ট বিবেচনা করে
  • ডেভলপমেন্ট টাইম বিবেচনা করে 
  • স্কেলিবিলিটি বিবেচনা করে 
  • বাজেট পরিকল্পনা ও হার্ডওয়্যার রিকোয়ারমেন্ট

Amazon এর টেকনোলোজি সেট, 

৪) মার্কেটিং প্ল্যান

নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম নাকি মার্কেটপ্লেস? 

যেহেতু আপনি ই-কমার্স বিজনেস উদ্যোক্তা হতে চান তাই প্রথমে সিদ্ধান্ত নিন আপনি কি নিজস্ব ই-কমার্স পরিচিতি তৈরি করতে চান, নাকি প্রতিষ্ঠিত মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমে বিজনেস করতে চান। 

আপনি চাইলে একই সাথে মার্কেটপ্লেস ও নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বিজনেস চালিয়ে যেতে পারেন। তবে দুটি ভিন্ন প্লাটফর্মের জন্য আলাদা আলাদা বিজনেস প্ল্যান প্রয়োজন। 

এটি পরিষ্কার ভাবে জানা জরুরী যে আপনি নিজস্ব ব্র্যান্ড তৈরি করতে চান নাকি শুধুমাত্র মার্কেটপ্লেস ব্যবহার করে প্রোডাক্ট বেচাকেনা করতে চান। 

যদি নিজের ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি তৈরি করতে চান তবে নিজের ই-কমার্স ওয়েবসাইট প্রয়োজন।  

আর নিজের ব্র্যান্ড তৈরি করতে না চাইলে শুধুমাত্র প্রোডাক্ট বেচাকেনা করার জন্য বাংলাদেশে এবং দেশের বাইরে অনেক স্বনামধন্য মার্কেটপ্লেস রয়েছে, যেখানে আপনি একাউন্ট খুলে আপনার প্রোডাক্ট শোকেস করে বেচাকেনা চালিয়ে যেতে পারেন।

নিজের ই-কমার্স ওয়েবসাইট এবং মার্কেটপ্লেসের মধ্যে পার্থক্য কি? 

নিজের ই-কমার্স ওয়েবসাইটের সমস্ত নিয়ন্ত্রণ আপনার নিজের থাকে। প্রোডাক্ট ইনফো,কাস্টমার ডাটা আপনি ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করতে পারেন। 

অপরদিকে মার্কেটপ্লেস শুধুমাত্র আপনার প্রোডাক্ট বেচাকেনায় সহায়তা করে, কিন্তু কখনোই কাস্টমারদের ডাটা আপনাকে তারা হস্তান্তর করবে না।

ই কমার্স বিজনেস হচ্ছে ডাটা নির্ভর বিজনেস এখানে যার যতবেশি কাস্টমার ডাটাবেজ রয়েছে সে তত দ্রুত এগিয়ে যাবে।

তাই যদি দীর্ঘমেয়াদী বিজনেস পরিকল্পনা করেন এবং নিজের ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করতে চান তবে নিজস্ব ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরীর মাধ্যমে বিজনেস শুরু করার পরিকল্পনা করুন। আর যদি শুধুমাত্র প্রোডাক্ট বেচাকেনা করার পরিকল্পনা করেন তবে এই মুহূর্তে মার্কেটপ্লেস আপনার জন্য আদর্শ সমাধান।

সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম সেটআপ

একবার যখন আপনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন মার্কেটপ্লেস অথবা নিজস্ব ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি  কোন মডেলে শুরু করবেন, এবারে আপনার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো সেটআপ করে নিন। 

যদি মার্কেটপ্লেস নির্ভর বিজনেস পরিচালনা করতে চান তবে প্রথম থেকেই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম আপনাকে ভালো একটি অবস্থানে নিয়ে যেতে সহায়তা করবে। অনেক ক্ষেত্রে মার্কেটপ্লেসে একাউন্ট করার জন্য মিনিমাম রিকোয়ারমেন্ট হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়া থাকা বাধ্যতামূলক।   

বর্তমান সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষ করে ফেসবুক ই-কমার্স বিজনেস পরিচালনার জন্য যথেষ্ট সুবিধা প্রদান করে।

নিজস্ব ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি তৈরি করতে হলেও আপনাকে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, যেখানে ট্রাফিক রয়েছে সেখানেই রয়েছে বিজনেস অপরচুনিটি।

বিজনেসর ধরনভেদে কোন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো আপনি অগ্রাধিকার দিবেন সেটি নির্বাচন করতে হবে।

যদি পরিকল্পনা করেন ফ্যাশন ব্র্যান্ড, আর্ট অ্যান্ড ক্রাফট, বুক অ্যান্ড প্রিন্টিং, ফুটওয়ার বা লাইফ স্টাইল প্রোডাক্ট নিয়ে বিজনেস করার তবে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ আপনাকে সুবিধা দিবে।

অপরদিকে মেডিকেল ইকুইপমেন্ট ১৮+ রেট প্রোডাক্ট, কর্পোরেট সার্ভিস ইত্যাদি নিয়ে ই-কমার্স বিজনেস শুরু করতে চাইলে ইমেইল মার্কেটিং প্ল্যাটফর্ম, এসএমএস মার্কেটিং প্ল্যাটফর্ম, গুগল ইত্যাদি মিডিয়াগুলোকে প্রাধান্য দিতে পারেন।

মেডিকেল ইকুইপমেন্ট অথবা ১৮+ রেটেড প্রোডাক্টগুলো জন্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে মার্কেটিং করা কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই সকল প্রোডাক্ট মার্কেটিং করার জন্য তারা আপনাকে অনুমতি দেয় না।

প্রতিযোগীদের কোয়ালিটি এবং লেভেল সম্পর্কে জানুন

নিজস্ব ব্র্যান্ড হোক অথবা মার্কেটপ্লেস দুই জায়গাতেই আপনার অসংখ্য প্রতিযোগী রয়েছে তাই হুটহাট শুরু করার আগেই সতর্কতার সাথে আপনার প্রতিযোগীদের বিহেভিয়ার, তাদের প্রোডাক্টের প্রাইস, প্রোডাক্ট কোয়ালিটি, বিজনেস পলিসি, শিপমেন্ট প্রসেস, কি ধরনের ডিসকাউন্ট তারা কাস্টমারদেরকে দিচ্ছে প্রতিটি বিষয় নিয়ে স্থির ভাবে চিন্তা করুন।

প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে টিকে থাকতে হলে আপনার নিজের বিজনেসের জন্য কি ধরনের পলিসি, প্রাইসিং এবং বিজনেস স্ট্র্যাটিজি তৈরি করতে হবে সেকি ঠিক করে ফেলুন।

এর ফলে যখন আপনি বিজনেস শুরু করবেন তখন কাস্টমারদের বিভিন্ন জিজ্ঞাসার যৌক্তিক উত্তর আপনার কাছে থাকবে।

কনটেন্ট ডেভেলপমেন্ট এবং গ্রাফিক ডিজাইনে মনোযোগী হন

হিন্দিতে খুব পপুলার একটি ডায়ালগ রয়েছে, “যো দিখতা হে ও বিখতা হে”। সেটাই বিক্রি হয় যা দেখা যায়।

ই-কমার্স বিজনেসে কাস্টমার আপনার প্রোডাক্ট হাতে নিয়ে দেখার আগে প্রোডাক্টের ছবি দেখে। প্রোডাক্টটির ব্যবহার  সম্পর্কে জানে ডেসক্রিপশন পড়ে, প্রোডাক্টের কার্যকারিতা সম্পর্কে ধারনা পায় মার্কেটিং কনটেন্ট পড়ে।

আপনি যখন ই-কমার্স বিজনেস শুরু করার পরিকল্পনা করছেন তখন মার্কেটিং কন্টেন্ট এবং আকর্ষনীয় গ্রাফিক ডিজাইন তৈরি নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল টুলস এবং টেকনোলজি প্রস্তুত রাখুন।

যদি নিজে কন্টেন্ট লিখতে পারেন তবে ভালো,  না হলে অনেক এক্সপার্ট কনটেন্ট রাইটার রয়েছে যাদের সহযোগিতা নিতে পারেন।

গ্রাফিক ডিজাইনের জন্য ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর, ডিজিটাল পেইন্টিং অথবা অনেক ফ্রি এবং পেইড অনলাইন গ্রাফিক ডিজাইন টুইস রয়েছে সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন।

যদি আপনার রাইটিং স্কিল না থাকে অথবা ডিজাইন সম্পর্কে ধারনা কম থাকে তবে কোন একটি দক্ষ এজেন্সির সহায়তা নিতে পারেন তারা সে বিষয়ে আপনাকে সাহায্য করবে।

প্রোডাক্ট প্রাইসিং, প্রফিট মার্জিন, পলিসি,  টার্ম এন্ড কন্ডিশন

বিজনেস শুরু করার আগেই আপনার বিজনেস পলিসি, প্রোডাক্ট রিটার্ন এবং রিফান্ড পলিসি, টার্মস এন্ড কন্ডিশন, প্রফিট মার্জিন এগুলো নির্ধারণ করে ফেলতে হবে।

পরবর্তী সময়ে কাস্টমার ফিডব্যাকের উপর নির্ভর করে আপনার সমস্ত রকম প্রোডাক্টের জন্য প্রাইসিং, পলিসি, টার্ম এন্ড কন্ডিশন ইত্যাদি অপটিমাইজ করবেন। 

একটি বিষয় মনে রাখবেন যদি প্রোডাক্ট প্রাইসিং, প্রফিট মার্জিন, পলিসি,  টার্ম এন্ড কন্ডিশন আপনাকে এবং আপনার কাস্টমার উভয়কে লাভবান করে না, সেটি বিজনেসের জন্য ইতিবাচক নয়।

৫) অপারেশন প্ল্যান

এই অংশটি নির্ধারণ করে আপনার বিজনেসের প্রতিদিনের রূপরেখা। কীভাবে বিজনেসটি পরিচালিত হবে, মানুষ কীভাবে ক্লাইন্টে রূপান্তর হবে, এবং কীভাবে আপনি তাদের সেলস অর্ডারগুলি পূরণ করবেন?

চিন্তা করুন, 

  • আপনার কোন সরঞ্জাম এবং সরবরাহের প্রক্রিয়া প্রয়োজন?
  • বিজনেসের চেইন অফ কমান্ড কী হবে, তাদের দায়িত্বে কি হবে?
  • আপনি কি প্রোডাক্ট ডেভেলপ করবেন নাকি রিসেল করবেন? 
  • আপনার কর্মীদের কি প্রয়োজন?
  • বিজনেসের উন্নতির সাথে সাথে সকল অপারেশন প্রক্রিয়া কি একই থাকবে, নাকি এর পরিবর্তন প্রয়োজন? 

প্রোডাক্ট শিপমেন্ট এবং অন্যান্য লজিস্টিক সাপোর্ট

শুধু প্রোডাক্ট বেচে দিয়ে ই-কমার্স বিজনেসের কাজ শেষ হয়ে যায় না, প্রোডাক্টটি কাস্টমারদের হাতে সফলভাবে পৌঁছে দেওয়া এবং পেমেন্ট গ্রহণের মাধ্যমে একটি ই-কমার্স ট্রানজেকশন সফল ভাবে সম্পন্ন হয়।

তাই যখন ই-কমার্স বিজনেস পরিকল্পনা করছেন তখন প্রোডাক্ট শিপমেন্টের জন্য কোন third-party প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নিবেন নাকি নিজস্ব প্রোডাক্ট ডেলিভারি সিস্টেম চালু করবেন সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিন।

যাদের ইনভেস্টমেন্ট তুলনামূলকভাবে কম এবং ইতিপূর্বে বিজনেস পরিচালনার সম্যক অভিজ্ঞতা না থাকলে  উদ্যোক্তাদের জন্য আমাদের পরামর্শ হবে প্রোডাক্ট শিপমেন্টের জন্য থার্ড পার্টি প্রতিষ্ঠানগুলো সহায়তা নিন।

শুরুতেই শিপমেন্টের জন্য নিজস্ব সিস্টেম চালু করলে আপনার বিজনেসের ব্যয় বেড়ে যেতে পারে।

যারা ইতিপূর্বে ফিজিক্যাল স্টোরের মাধ্যমে  বিজনেস পরিচালনা করেছেন কিন্তু এখন ই-কমার্স বিজনেস আসতে চান তাদের ক্ষেত্রে নিজস্ব ডেলিভারি সিস্টেম তৈরি করা যৌক্তিক হবে। 

এটি তাদেরকে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য একটি এক্সট্রা সুবিধা প্রদান করবে।তবে নিজস্ব ডেলিভারি সিস্টেম চালু করবেন কি না সেটি নির্ভর করবে আপনার আর্থিক সামর্থ্যের উপরে। 

পেমেন্ট সিস্টেম

বিজনেসে টিকে থাকতে প্রয়োজন টাকা বা কাস্টমারদের পেমেন্ট তাই শুরুতেই নির্বাচন করুন আপনি কিভাবে পেমেন্ট নিতে চান।

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের  সকল ই-কমার্স উদ্যোক্তা পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে। এটি লেনদেনের জন্য অনেক বেশি নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য সাথে  ই-কমার্স বিজনেসের একটি মূল অংশও বটে।

শুরুর দিকে আপনি ক্যাশ অন ডেলিভারি দিয়ে চালিয়ে নিতে পারেন তবে একটি সময় আপনাকে অবশ্যই পেমেন্ট গেটওয়েতে আসতে হবে।  কারণ মানসম্মত কাস্টমার খুচরা পয়সা মানিব্যাগে রাখার থেকে ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ও ডেবিট কার্ড অথবা ডিজিটাল মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেম ব্যবহার করতে বেশি অভ্যস্ত।

পরিশেষে

এখন আপনি জানেন একটি ই-কমার্স বিজনেস শুরু করার আগে ঠিক কোন কোন বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে।

এই গাইড থেকে ধারণা নিয়ে আপনি আপনার বিজনেসের জন্য একটি বিস্তারিত বিজনেস প্ল্যান তৈরি করুন। আপনার তৈরি করা বিজনেস প্ল্যান নিয়ে আমাদের সাথে আলোচনা করতে পারেন। 

আরো কি কি বিষয় সেখানে যুক্ত করা যেতে পারে বা কোন কোন বিষয়গুলো অপ্রয়োজনীয় সেটি নিয়ে আমাদের মতামত পেতে কমেন্ট করুন। 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট

বিজনেসের জন্য ফেসবুক লাইভ (Facebook Live) গাইড:  কি, কেন, কীভাবে?

বিজনেসের জন্য ফেসবুক লাইভ (Facebook Live) গাইড: কি, কেন, কীভাবে?

শেয়ার করুনফেসবুক লাইভ (Facebook Live) কি? ফেসবুক লাইভ ফেসবুকের এমন একটি ফিচার যা একজন ইউজারকে তার বন্ধু, ফলোয়ার এবং পাবলিকদের...

একটি প্রফিটেবল ই-কমার্স বিজনেস শুরুর কমপ্লিট গাইডলাইন

একটি প্রফিটেবল ই-কমার্স বিজনেস শুরুর কমপ্লিট গাইডলাইন

শেয়ার করুনআপনি যদি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন বা আপনার বিশেষ কোনো স্কিল থাকে (যেমন – ছবি আঁকা, কাস্টম ড্রেস তৈরী...

ব্যবসার জন্য ফেসবুক পেজ নাকি ই-কমার্স ওয়েবসাইট – কোনটা ভালো?

ব্যবসার জন্য ফেসবুক পেজ নাকি ই-কমার্স ওয়েবসাইট – কোনটা ভালো?

শেয়ার করুনকামাল একজন ফেসবুক সেলার – ফেসবুক এর মাধ্যমে তিনি ফ্যাশন আইটেম বিক্রি করেন।  ইদানিং ব্যবসা নিয়ে কামাল বেশ দুশ্চিন্তার...

আপনার মূল্যবান মতামত দিন

মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না। আবশ্যক ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত *

আগের মন্তব্য গুলো পড়ুন

সবার আগে মন্তব্য করুন