ফেসবুক বিজনেস পেজে প্রোডাক্টের পোস্ট দিলে কেন সেল হয় না

ফেসবুক বিজনেস পেজে প্রোডাক্টের পোস্ট দিলে কেন সেল হয় না
শেয়ার করুন

জানতে চান? আপনার ফেসবুক বিজনেস পেজের পোস্টগুলো কেন সেল জেনারেট করতে পারে না? কারণ, প্রোডাক্টের পোস্টগুলোর গ্রহণযোগ্য উপস্থাপনা হচ্ছে না।

যার ফলে প্রতিদিন ফেসবুক বিজনেস পেজে একাধিক পোস্ট করলেও সেটি কাস্টমারদের কাছে গুরুত্ব রাখে না। তাই আপনার সেল পোস্ট দ্বারা প্রোডাক্ট সেল হয় না। 

ফেসবুক সেল পোষ্টগুলো হতে হবে এমন,যেখানে কাস্টমার জানবে প্রোডাক্টটি কেন তার জন্য ভ্যালুয়েবল? 

এটি তাদের কি ধরনের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে এবং এই প্রোডাক্ট দ্বারা তারা তাদের সমস্যার সমাধান করতে পারবে কিনা?

তারা যখন এই সকল প্রশ্নের সমাধান পাবেন, তখন কাস্টমার পেজে প্রোডাক্টের পোস্টগুলোর প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে। তারা তাদের প্রশ্নগুলো আপনাকে জানাবে, উত্তর খুঁজবে, তৈরি হবে কাস্টমার এঙ্গেজমেন্ট। 

কাস্টমারদের কনভারসেশন গুলো ধীরে ধীরে বাড়বে একই সাথে বাড়বে প্রোডাক্টের অর্ডার।  

তথ্য উপস্থাপন করুন যা কাস্টমারদের প্রয়োজন

ফেসবুক মার্কেটিং এর জগতে সেলারদের চাওয়া তার পোস্টটি অধিক সংখ্যক অডিয়েন্সকে এঙ্গেজ করুন। এই উদ্দেশ্য নিয়ে প্রত্যেকেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আর এত এত ফেসবুক পোস্টের ভিড়ে আপনার প্রোডাক্টের পোস্টটি পড়ার জন্য মানুষের কাছে সময় খুব কম।

যে প্রোডাক্টটি আপনি বিক্রি করছেন সেটি কি? কাদের জন্য? এর প্রয়োজনীয়তা এবং এটি ব্যবহারকারির যে সমস্যাগুলো সমাধান করতে সক্ষম, সেটি একটি সুইট ও শর্ট প্যারাগ্রাফের মাধ্যমে সর্বাধিক দুই থেকে তিন লাইনে উপস্থাপন করবেন।

উদাহরণ হিসেবে উপরের চিত্রটি দেখতে পারেন, যেখানে সিম্পল ভাবে একটি শর্ট প্যারাগ্রাফের মাধ্যমে প্রোডাক্টের বর্ণনা, গুনাগুন এবং কার্যকারিতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। 

কাস্টমারদের চাওয়া বুঝতে হবে ও  কেয়ার করতে হবে

কাস্টমারদের চাওয়া জানলেই হবে না, একবার যখন জানতে পারবেন সেই মাফিক কনটেন্টগুলো ডিজাইন করবেন।

সেই সকল তথ্য উপস্থাপন করবেন যেগুলো বায়িং ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে।  ঠিক যেমনটি নিচের পোস্টটি দেখানো হয়েছে,

 

যেখানে একটি হেডফোনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে।

যেগুলো একজন কাস্টমারের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয়। আর এগুলো মূলত একটি প্রোডাক্ট কেনার সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাবিত করে। 

কল-টু-অ্যাকশন, নো এক্সট্রা ডেসক্রিপশন

একটি প্রোডাক্টের বর্ণনা খুব চমৎকার হলেও কাস্টমারের সামনে  সেটি কেনার প্রক্রিয়া সম্পর্কে কোন পরিস্কার তথ্য যদি না থাকে তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খেয়াল করা গেছে তারা প্রোডাক্ট না অর্ডার করে চলে যান।

ফেসবুক পেজ পোস্টের ক্ষেত্রে ফেইক বাটন ব্যবহারের কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে। তাই সরাসরি Buy Now, Order Now  এই ধরনের বাটন পোস্টের পিকচারে ব্যবহার করবেন না।  

তাহলে কিভাবে আপনি কল-টু-একশন প্রমোট করতে পারেন?  যারা একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে নিচের পোস্টটি খেয়াল করুন,

যেখানে সরাসরি “Order Now” শব্দটি না উল্লেখ করে অর্ডার প্রক্রিয়ার জন্য কাস্টমার কি করতে পারেন সেটি বোঝার জন্য একটি প্রক্রিয়ার বর্ণনা করা হয়েছে।  এটি কল টু একশনের অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।

যে প্রোডাক্টটি অলরেডি পপুলার ও ব্র্যান্ডেড সেই প্রোডাক্ট সেল করার জন্য সেলারকে এক্সট্রা ডেসক্রিপশনে না গিয়ে সরাসরি Clear-Cut কল টু অ্যাকশনে যাওয়াটাই যৌক্তিক। এক্ষেত্রে পারচেস প্রসেস বা অর্ডার প্রসেস নিয়ে কথা বলা সরাসরি কল টু একশনের হেভিওয়েট রিপ্লেসমেন্ট। 

ফটোগ্রাফি বা ভিডিও যখন কথা বলে

অনলাইন কেনাকাটায় মানুষ প্রোডাক্টটি হাতে নিয়ে অনুভব করতে পারে, না তাই অনলাইন সেলস একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়।

কিন্তু আপনি চাইলেই প্রোডাক্টটির অভিজ্ঞতা তাকে অনুভব করাতে পারবেন ফটোগ্রাফি অথবা ভিডিওর মাধ্যমে।

ভিজুয়ালাইজেশন একটি প্রোডাক্ট সম্পর্কে ধারণা পেতে এবং এক্সপিরিয়েন্স সম্পর্কে মনের মধ্যে অনুভূতি তৈরি করতে কার্যকর একটি পদ্ধতি।

উপরের চিত্রটি খেয়াল করলে দেখবেন একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান যারা  ম্যাটারনিটি ক্লদিং সেল করেন, তারা একটি জাম্পস্যুট এর উপস্থাপনা করেছেন একজন প্রেগন্যান্ট মায়ের মাধ্যমে। 

যা থেকে টার্গেট অডিয়েন্স বা প্রেগন্যান্ট মায়েরা সহজেই বুঝতে পারবে প্রোডাক্টি তার জন্য কেমন হতে পারে। এটি তার বায়িং ডিসিশনকে প্রভাবিত করে। 

এবারে উপরের চিত্রটি খেয়াল করুন, একটি “কী হোল্ডার” এর ভিন্ন ভিন্ন কালার ভেরিয়েশন গিফ পিকচার এর মাধ্যমে দেয়া হয়েছে। যেখানে আপনি পছন্দের কালারটি সিলেক্ট করলে ডিসপ্লের চিত্রটিতে সেইম কালারের “কী হোল্ডার” প্রদর্শিত হবে।

এটি আপনার পছন্দের কালার এর “কী হোল্ডার” টি দেখতে কেমন হতে পারে সে বিষয়ে সম্যক ধারণা প্রদান করে এবং সেল জেনারেট করার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং শক্তিশালী একটি ফিচার যা আপনি ব্যবহার করতে পারেন।

এই ধরনের কমার্শিয়াল পোস্ট তৈরি করতে ভিন্ন ভিন্ন কালারের প্রোডাক্ট গুলো নিয়ে স্লাইড, গিফ ইমেজ অথবা ভিডিওগ্রাফি তৈরি করুন। 

কাস্টমার রিভিউ পোস্ট আকারে প্রকাশ করুন

ফটো সোর্সঃ গেজেট এন্ড গিয়ার 

অনেকে মনে করেন শুধুমাত্র পেজে রিভিউ দিলেই কাজ শেষ কিন্তু সেটি প্রমোট করাও জরুরি। দেখা গেছে প্রায় 95% কাস্টমার পারচেস ডিসিশন  গ্রহণ করে কাস্টমার রিভিউ দেখে।

আক্ষরিক অর্থে আপনার বিজনেসের কাস্টমাররা আপনার প্রোডাক্ট সম্পর্কে কি বলছে? পারচেস পরবর্তী সময়ে তাদের অভিজ্ঞতা কি? এবং তারা প্রোডাক্ট নিয়ে সন্তুষ্ট কিনা? সেগুলো প্রমোট করুন। 

অথবা প্রোডাক্ট কাস্টমারদের একচুয়াল প্রবলেম সল্যুশনে সক্ষম কিনা এসব বিষয় নিয়ে কাস্টমারদের অভিজ্ঞতা ও মতামত নিয়মিতভাবে পোস্ট আকারে প্রকাশ করুন।

উপরের চিত্রে একটি পার্সোনাল কেয়ার ব্র্যান্ড তাদের কাস্টমারদের অভিজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। এটি অনলাইন সেলসের জন্য প্রমানিত পদ্ধতি।

সোশ্যাল প্রুফ এন্ড সার্টিফিকেশন

আপনার প্রোডাক্টের আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় ক্ষেত্রে কোন গুরুত্বপূর্ণ সার্টিফিকেশন বা আপ্রুভাল থাকলে সেগুলো প্রদর্শন করুন। এগুলো প্রোডাক্টের অথেন্টিসিটি সম্পর্কে আওারনেস ও অথরিটি তৈরি করে।

ঠিক যেমনটি নিচের বিউটি প্রোডাক্ট উপস্থাপন করেছে, 

ছবিটিতে নিচের দিকে খেয়াল করলে দেখবেন সেখানে বেশ কিছু ক্লিনিক্যাল এবং কমার্শিয়াল সার্টিফিকেশনের ব্যাজ উল্লেখ আছে। এগুলো কাস্টমারদের এটেনশন পেতে হেল্প করে।

একই উপায়ে প্রোডাক্টের ভালো এবং খারাপ দিকগুলো যদি গ্রাফিক্যাল ভিউের মাধ্যমে তুলে ধরেন। তাহলে  খুব সহজে সেগুলো কাস্টমারদের নজরে আসে এবং এই ছোটখাটো বিষয়গুলো কাস্টমারদের পারচেস ডিসিশনকে ট্রিগার পয়েন্ট নিয়ে যেতে হেল্প করে। 

নিচের ছবিটি খেয়াল করুন,

পরিশেষে

আপনার ফেসবুক বিজনেস পেজের পোস্টগুলো শুধুমাত্র সাধারন কোন পোস্ট হলে সেটি দ্বারা কখনই সেল জেনারেট করতে পারবেন না। 

প্রতিটি পোস্ট আপনার অডিয়েন্সের জন্য ভ্যালুয়েবল হতে হবে। আপনার প্রোডাক্ট সম্পর্কে, কাস্টমারদের পেইন্ট পয়েন্ট নিয়ে এবং সেগুলোর সমাধান নিয়ে যত অল্প কথায় পরিষ্কার ধারণা প্রদান করতে পারবেন, তত বেশি সেল পোস্টগুলো কাস্টমারদের এঙ্গেজ করবে। 

কাস্টমার কমেন্টে প্রোডাক্ট গুলো নিয়ে কথা বলবে, বিস্তারিত জানতে চাইবে।  আর যখন আপনি সফলভাবে এটি করতে সক্ষম হবেন, ঠিক তখনই কাস্টমার অর্ডার করবে। 

 বিষয়গুলো অত্যন্ত ছোটখাট মনে হলেও অধিকাংশ সেলার এটি করতে সক্ষম হন না, কিন্তু ফেসবুক পেজে প্রোডাক্ট সেলের ক্ষেত্রে টপ সেলার ও ফেলিওরদের মাঝে এগুলো বড় ধরনের পার্থক্য গড়ে দেয়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট

বিজনেসের জন্য ফেসবুক লাইভ (Facebook Live) গাইড:  কি, কেন, কীভাবে?

বিজনেসের জন্য ফেসবুক লাইভ (Facebook Live) গাইড: কি, কেন, কীভাবে?

শেয়ার করুনফেসবুক লাইভ (Facebook Live) কি? ফেসবুক লাইভ ফেসবুকের এমন একটি ফিচার যা একজন ইউজারকে তার বন্ধু, ফলোয়ার এবং পাবলিকদের...

গুগল ট্যাগ ম্যানেজার (Google tag manager) এর কাজ ও ব্যবহার

গুগল ট্যাগ ম্যানেজার (Google tag manager) এর কাজ ও ব্যবহার

শেয়ার করুনডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে কাজ করলে অথবা ইন্টারেস্ট থাকলে আপনি হয়তো গুগল ট্যাগ ম্যানেজার (GTM) এবং ফেসবুক পিক্সেল সম্পর্কে শুনে...

৭ টি সেরা সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং (SEM) টুল

৭ টি সেরা সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং (SEM) টুল

শেয়ার করুনআজ আমরা সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং করার ৭ টি সেরা টুল সম্পর্কে ধারনা দেবার চেষ্টা করবো। সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং করার...

আপনার মূল্যবান মতামত দিন

মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না। আবশ্যক ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত *

আগের মন্তব্য গুলো পড়ুন

সবার আগে মন্তব্য করুন