মার্কেটিং কমান্ডমেন্টস: বিজনেস পরিচালনার ঠিক বেঠিকের আদ্যোপান্ত

শেয়ার করুন

সেরা মার্কেটিং কমান্ডমেন্টস কোনগুলো? বিজনেসে কিভাবে সফল হবেন সে বিষয়ে অনলাইনে হাজারো উপদেশ রয়েছে, যা আমাদের সফল বিজনেস পরিচালনায় উৎসাহ যোগায়। কিন্তু কোন গুনে একজন মানুষ সফল বিজনেস পরিচালনার মহানায়ক হয়ে উঠে সে বিষয়ে কেউ বলে না। এটি তার পক্ষে বলা অসম্ভব, যদি না সে নিজেই সফলতার অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। 

আজ আপনাদের শোনাবো একজন সফল ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সির প্রধান কর্মকর্তার “মার্কেটিং” বিষয়ে নিজ অভিজ্ঞতার কথা। এটি কোন উপদেশ নয়, এটি আন্তর্জাতিক ডিজিটাল বিক্রয় ও বিপণন জগতে একজন মানুষের সফল হবার মূলমন্ত্র।

আপনি যদি তার উপলব্ধিগুলো নিজ বিজনেস পরিচালনায় ব্যবহার করতে সক্ষম হন, তবে নিশ্চিতভাবে আপনাকে পিছনে ফিরে দেখতে হবে না। বদলে যাবে বিজনেসের গতিপথ। উন্মোচিত হবে এমন এক সম্ভবনাময় দিগন্ত যা আপনাকে দিগ্বিজয়ী উদ্যোক্তার খ্যাতি এনে দিবে।   

Ryan deiss – যিনি একই সাথে একজন উদ্যোক্তা, লেখক এবং বিনিয়োগকারী। শার্ক ট্যাঙ্ক তারকা “ডায়মন্ড জন” তার বিষয়ে বলতে গিয়ে বলেছিলেন “তাঁর কোম্পানিগুলো ইন্টারনেট দুনিয়ার মালিক।” কি ছিলো তার উপলব্ধিগুলো আসুন জানি, 

০১.

প্রথমে বিজনেসের রেভিনিউ অর্জন করা জরুরি তারপর ব্র্যান্ড তৈরি করুন।

যদিও “ব্র্যান্ড” বিজনেসের জন্য অপরিহার্য কিন্তু আপনার প্রথম লক্ষ্য অবশ্যই সেলস হতে হবে। বিজনেসের সেলস আনতে গিয়ে যদি ব্র্যান্ড তৈরিকে বিসর্জন দেন, তবে পরবর্তী সময়ে সেটি আবার পুনুরদ্ধার করার সুযোগ পাবেন। কিন্তু আপনি ব্র্যান্ড তৈরি করতে গিয়ে যদি বিজনেসের সেলস বিসর্জন দেন তাহলে সব আশা হারিয়ে ফেলবেন। 

০২.

বিজনেসের জন্য অফার তৈরি করুন, শ্লোগান নয়।

শ্লোগান হয়তো আপনাকে সৃজনশীল কাজের জন্য পুরুস্কার জেতাবে, কিন্তু সেটি আপনার সেলস এনে দিবে না। সেরা মার্কেটিং সেটাই যা টার্গেট অডিয়েন্সকে অ্যাকশন নিতে উৎসাহিত করে। এটি কেবলমাত্র মানুষকে বিনোদন দেয় না। যাদের অ্যাড শুধুমাত্র কাস্টমারদের বিনোদন দিয়ে থাকে কিন্তু সেলস নাম্বার বাড়াতে কাজে আসে না, তাদের জন্য মার্কেটিং এর দুনিয়ায় রয়েছে দূর্দশা। 

০৩.

বিজনেস ডাটার সাথে বুদ্ধিমত্তাকে ব্যালেন্স করুন।

১০ দিনের মধ্যে ৯ দিন বিজনেস ডাটা আপনাকে বিজয়ী হতে সাহায্য করবে ঠিকই কিন্তু কখনো কখনো আপনার বুদ্ধিমত্তার উপর আপনাকে ভরসা করতে হবে।এমন কিছু করতে হবে যা ডাটা দিয়ে পরিমাপ করা বা কোন নাম্বার দিয়ে ট্র্যাকিং যোগ্য না।

০৪.

কাস্টমার এটেনশন ও অ্যাওয়ারনেস বৃদ্ধি করতে খরচ করার মানসিকতা থাকতে হবে।

পেইড অথবা অর্গানিক… ইনবাউন্ড অথবা আউটবাউন্ড, এটি নিয়ে বিতর্ক করার মানে নেই। এই ধরনের তর্ক বুফে খেতে গিয়ে ডেজারট খাবেন নাকি বিফ সেটি নিয়ে বিতর্ক করার সামিল। যার যার প্রয়োজন অনুযায়ী মার্কেটিং এর জন্য বাজেট নির্ধারণ করবেন কিন্তু বাজেট থাকতেই হবে।    

০৫. 

কিছু কাস্টমার আপনাকে ছেড়ে যাবে, কিছু কাস্টমার আপনাকে পছন্দ করবে না। এটি সহজ ভাবে নিতে হবে।

আপনার বিজনেসের একজনও “হেটার” থাকবে না এমন কল্পনা অসম্ভব, এ অনেকটা পৃথিবীতে একটিও ধর্মান্ধ বা উগ্রপন্থী মানুষ না থাকার মতো ব্যাপার যা কিনা অসম্ভব বিষয়। গ্রেট মার্কেটিং সেটাই, যেখানে ভালো মন্দের পার্থক্য পরিস্কার হয়ে যায়।

০৬.

আপনাকে সুনির্দিষ্ট হতে হবে।

আপনার যে দাবিটি করছেন সেটি হতে হবে নির্দিষ্ট এবং তা আপনার কন্টেন্ট দ্বারা পরিস্কার ভাবে প্রকাশ করতে হবে। যদি চান সবাই আপনার ব্র্যান্ডকে সম্মানের সাথে গ্রহণ করুক তবে সেটাই বলুন যা প্রকৃত সত্য। 

০৭.  

সেল হচ্ছে বা  লিড জেনারেট সফল হয়েছে বলে আপনি মার্কেটিং বন্ধ করে দিবেন এমনটি কখনোই করবেন না।

কাস্টমার অর্ডার সম্পন্ন করলেই মার্কেটিং এর কাজ শেষ হয় না।কারো দীর্ঘ প্রেমের পরে প্রিয়তমার সাথে বিয়ে হয়ে গেলে বিয়ের পরে কি তারা রোমান্স করা বন্ধ করে দিবেন?  সেটা নিশ্চয় হতে পারে না । 

০৮. 

বড় আইডিয়াগুলো খুব অল্প কোথায় প্রকাশ করুন।

যেমন, “F=ma” নিউটন তার এই সূত্র দ্বারা বস্তুর ভরবেগের ধারণার ব্যাখ্যা সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশ করেছেন। যখন আপনার কিছুই বলার থাকে না, অনুগ্রহ করে আপনার যে কিছু একটা বলা দরকার – এই বিষয়ে আপনাকে কনভেন্স করার সুযোগ অন্য কাউকে দিবেন না।

০৯. 

কাস্টমারদের বোঝার সুবিধার্থে আপনি  ইচ্ছেমতো বেশি শব্দ ব্যবহার করতে পারেন। যার চেয়ে বড় আর কিছু নেই কিন্তু সেটি তাদের জন্য খুব বিরক্তিকর হবে। 

১০.

আপনি যা প্রতিজ্ঞা করবেন তার চেয়ে ২-গুন বেশি দেবার চেষ্টা করবেন।

অর্থাৎ প্রতিজ্ঞা করবেন কম কিন্তু ডেলিভারি করবেন তারচেয়ে বেশি। খেয়াল করবেন, আপনার মার্কেটিং কন্টেন্ট যেন কখনোই একটি ব্যাংক চেকের মতো ভাব প্রকাশ না করে, কারন কাস্টমার সেটির বিপরীতে টাকা পাবে না। 

 ১১.

সর্বদা অহেতুক নতুন জিনিস নিতে মাতামাতি করবেন না।

বিক্রেতাদের কখনোই বলবেন না এখন কোন ট্রেন্ড চলছে, কোনটা হট সেলার। শুধু তাদের অবজারভ করুন, দেখুন আপনার কাস্টমার কি আচরণ করছে। 

১২. 

বুদ্ধিদীপ্ত হবার চেয়ে স্পষ্ট হওয়াকে বেছে নিন।

১৩. 

আপনার কাস্টমারদের সাথে কথা বলুন।

যদি তাদের সাথে না কথা বলেন তবে তাদের সম্পর্কে জানবেন কিভাবে? মার্কেটিং অনুমান বা টেস্ট করার বিষয় না। মার্কেটিং হচ্ছে, রিসার্চ,  রিসার্চ,  রিসার্চ, টেস্ট, রিসার্চ,  রিসার্চ,  রিসার্চ, টেস্ট, রিসার্চ, টেস্ট, স্কেল  নিজেকে বিপণনকারী হিসেবে পরিচয় দিতে হলে আবশ্যই কমপক্ষে ২৫ জন কাস্টমারের সাথে আপনাকে সরাসরি কথা বলতে হবে।

১৪.  

আপনার কোনো একটি বিশেষ গুনের কারনে কাস্টমার আপনার সাথে আছে এবং আপনার থেকে কেনাকাটা করছে বলে স্বস্তির ঢেকুর তুলবেন না।

আপনার একটি ভুলে তারা আপনাকে ছেড়ে চলে যাবে এবং তারা এটিও চিন্তা করবে না যে আপনার একটি বিশেষত্ব আছে। তাই মার্কেটিং কন্টেন্ট লেখার সময় আপনার গ্রাহক ও আগামী দিনের সম্ভবনাময় কাস্টমারদেরকে মাথায় রাখুন।

১৫. 

“আপনি নিশ্চয় প্রথম দিনেই আপনার প্রেমিকাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসবেন না।”

৭০% সময় চিন্তা করুন আপনার কাস্টমারদের কি ম্যাসেজ দিবেন, ২৫% সময় ভাবুন ম্যাসেজগুলো দেবার ক্রমানুসার কি হবে সেটি নিয়ে আর বাকি ৫% সময় দিন টার্গেটিং করতে।আমরা টার্গেটিংকে অনেক বেশি মূল্যায়ন করি। সঠিক ম্যাসেজের জন্য সেরা টার্গেটিং কৌশল হচ্ছে, লক্ষ্যহীন টার্গেট অডিয়েন্সদের টার্গেটিং করে মার্কেটিং ম্যাসেজ দ্বারা ফিল্টার করে খুঁজে বের করা। 

১৬. 

সুপেয় পানি ফুটো পাত্রে সঞ্চয় করা ঠিক না। তাই প্রথমে অফার তৈরি করুন তারপর সেটাকে আরো বর্ধিত করতে কাজ করতে পারেন।

১৭. 

আপনাকে গল্প বলতে হবে।

পরিবর্তনের গল্প বলুন… নিজের বা বিজনেসের পরিচিতি নিয়ে গল্প বলুন… প্রতিযোগীদের থেকে আপনার এগিয়ে যাবার গল্প বলুন। মানুষ কখনোই এমন পদক্ষেপ গ্রহন করে না, যার মধ্যে তারা নিজেকে কল্পনা করতে পারে না। তাই একটি দারুন সম্ভবনার কল্পচিত্র নিজে আঁকুন এর পরে আপনার কাস্টমারদের সেটি আঁকতে উৎসাহিত করুন। যদি আপনি এটি করতে সফল হোন তবে কাস্টমার আপনার কাছে নিজে থেকেই ধরা দিবে। 

১৮. 

মনে রাখবেন মানুষ দুটি জিনিসের মধ্যে যেকোনো একটি কিনে, ১) পরিবর্তন ২) আত্মপরিচয়। তাই আর্ট অফ সেলিং জানতে হবে।

১৯.

আপনাকে নির্ভরযোগ্য হতে হবে। যা আপনি না সেই আচরণ করলে হবে না, সত্যকে প্রকাশ করতে হবে। 

২০.

মানুষকে বিনোদন দিন।

তথ্য দ্বারা কিছু মুহুর্তের জন্য কারও মনোযোগ আকর্ষণ করা যায়, কিন্তু সেই মনোযোগ স্থায়ী করা যায় বিনোদনের মাধ্যমে।

২১.

মানুষকে মাঝে মাঝে প্রান খুলে হাসতে সাহায্য করুন। সেরা বিপণনকারী সবকিছুর শেষে তার কাস্টমারদের হাসির খোরাক যোগাতে সক্ষম। 

২২.

মাঝে মধ্যে মানুষকে কাঁদানো জরুরি।

মানুষের যা নেই সেটি তাকে উপলব্ধি করতে দিতে হয়। আমাদের অপ্রাপ্তিগুলোই আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। 

২৩. 

আপনার কাস্টমারদের অসম্ভব ভালবাসুন।

তাদের সর্বাঙ্গীণ সুখ ও শান্তি কামনা করুন। “সহমর্মিতা” বিপণনের সবচেয়ে মূল্যবান দক্ষতা যেটা কাউকে শেখানো অসম্ভব।

পরিশেষে,

আপনি যদি বিজনেসের মার্কেটিং করতে  ভুল পথে পরিচালিত হন, কোন বিষয়গুলোকে গুরুত্বদিবেন তা নিয়ে হতাশায় থাকেন অথবা মার্কেটিং দুনিয়ায় রাজত্ব করার পরিকল্পনা করেন তবে উপরের আদেশগুলো পড়ুন, ভাবুন, কাজে লাগান।তবে  আপনি সঠিক পথের সন্ধান পাবেন।

আরো পড়ুনঃ

বিজনেসের উন্নতি পরিমাপ করার গুরুত্বপূর্ণ সাকসেস ম্যাট্রিক্স (Success Metrics) সমূহ 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট

একটি প্রফিটেবল ই-কমার্স বিজনেস শুরুর কমপ্লিট গাইডলাইন

একটি প্রফিটেবল ই-কমার্স বিজনেস শুরুর কমপ্লিট গাইডলাইন

শেয়ার করুনআপনি যদি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন বা আপনার বিশেষ কোনো স্কিল থাকে (যেমন – ছবি আঁকা, কাস্টম ড্রেস তৈরী...

ব্যবসার জন্য ফেসবুক পেজ নাকি ই-কমার্স ওয়েবসাইট – কোনটা ভালো?

ব্যবসার জন্য ফেসবুক পেজ নাকি ই-কমার্স ওয়েবসাইট – কোনটা ভালো?

শেয়ার করুনকামাল একজন ফেসবুক সেলার – ফেসবুক এর মাধ্যমে তিনি ফ্যাশন আইটেম বিক্রি করেন।  ইদানিং ব্যবসা নিয়ে কামাল বেশ দুশ্চিন্তার...

ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা ২০২১ বিশ্লেষণ

ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা ২০২১ বিশ্লেষণ

শেয়ার করুনবাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রনালয় জাতীয় ডিজিটাল কমার্স(সংশোধিত) নীতিমালা ২০২০ এর পদক্রম অনুসারে ‘ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা ২০২১’ (Digital Commerce Operation...

আপনার মূল্যবান মতামত দিন

মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না। আবশ্যক ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত *

আগের মন্তব্য গুলো পড়ুন

User Avatar
Najmul Hossain 14th June 2021 12:22 am
Thank you for your feedback. Stay with us to get more informative articles in the future.
User Avatar
Sumon Mahmud 9th June 2021 12:12 am
It's very useful article for me.