ফেসবুক অ্যাড অপটিমাইজেশনঃ অ্যাড ফ্যাটিগ কি? কিভাবে এই সমস্যা কাটিয়ে উঠবেন?

আজ আলোচনা করবো অ্যাড ফ্যাটিগ বিষয়ে তবে তার আগে কিছু প্রশ্ন, আপনার একটি সফল ফেসবুক অ্যাড ক্যাম্পেইন কি ধীরে ধীরে তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলছে?

অ্যাড খরচ বেড়ে যাচ্ছে কিন্তু তার বিপরীতে সেল হচ্ছে না। কাস্টমার অ্যাড দেখে আর আগের মতো সাড়া দিচ্ছে না? 

আপনি সম্ভবত অ্যাড ফ্যাটিগ জনিত সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন।  

অ্যাড ফ্যাটিগ কি? 

অ্যাড ফ্যাটিগ হচ্ছে ফেসবুক মার্কেটিং এর একটি টার্ম। যখন একজন অডিয়েন্স একটা অ্যাড বার বার দেখতে দেখতে বিরক্ত হয়ে যায় এবং সে অ্যাডের সাথে আর এঙ্গেজ হয়না, সেই অবস্থাকে  অ্যাড ফ্যাটিগ বলা হয়।

কিভাবে বুঝবেন আপনার ক্যাম্পেইনটি অ্যাড ফ্যাটিগ সমস্যায় ভুগছে? 

ফেসবুকের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ক্যাম্পেইন ম্যাট্রিক্স অ্যাড ফ্যাটিগ বোঝার জন্য সহায়ক। 

একটি হচ্ছে ফ্রিকোয়েন্সি এবং অন্যটি হচ্ছে Click-through রেট

ফ্রিকোয়েন্সি

একটি অ্যাড অডিয়েন্সদের গড়ে কতবার দেখানো হচ্ছে বা তারা গড়ে কতবার সেই অ্যাড দেখছে সেই সংখ্যাকে বলা হয় ফ্রিকোয়েন্সি। গড় ফ্রিকোয়েন্সি বের করা হয় টোটাল ইম্প্রেশন এর সাথে টোটাল রিচকে ভাগ দিয়ে। 

Click-through রেট

 

প্রতিবার অডিয়েন্স একটা অ্যাড দেখার পর সেটিতে ক্লিক তাদের ক্লিক করার যে শতকরা গড় অনুপাত অর্থাৎ টোটাল ইম্প্রেশন এর সাথে ক্লিক সংখ্যার পার্থক্য হচ্ছে Click-through রেট। 

যখন দেখবেন আপনার অ্যাড ক্যাম্পেইনটির ফ্রিকুয়েন্সি বেড়ে যাচ্ছে এবং click-through রেট কমে যাচ্ছে। ঠিক সে সময় বুঝবেন, আপনার ক্যাম্পেইনটি অ্যাড ফ্যাটিগ জনিত সমস্যায় পড়েছে। 

এই সমস্যা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছালে, ফেসবুকে একটি নোটিফিকেশন দিয়ে সতর্ক করা হয়। 

অ্যাড ফ্যাটিগ কেন হয়? 

ধরুন, একজন মানুষকে যদি একই ধরনের খাবার প্রতিবেলায় একটি লম্বা সময় ধরে দেওয়া হয় তবে কি হবে?  সে রুচিহীনতার ভুগবে। অর্থাৎ স্বাদের পরিবর্তন না থাকায় সে দীর্ঘ সময় ধরে সেই খাবারটি খেতে পারে না। 

একইভাবে একটি অ্যাড একজন মানুষকে লম্বা সময় ধরে ক্রমাগত দেখিয়ে গেলে সেটি তার জন্য আর কোনো গুরুত্ব রাখে না, এক সময় বিরক্তি বোধ করে আরো কিছুদিন পরে সেটি আর দেখতে চায় না। আর তখনই অ্যাড ফ্যাটিগ সৃষ্টি হয়। 

কিভাবে অ্যাড ফ্যাটিগ জনিত সমস্যা কাটিয়ে উঠবেন? 

ফেসবুক ক্যাম্পেইন যখন অ্যাড ফ্যাটিগ জনিত সমস্যার সম্মুখীন হয় তখন এমন কিছু কৌশল রয়েছে যেগুলো অবলম্বন করার মাধ্যমে খুব সহজেই এ সমস্যা থেকে বের হয়ে আসা যায়। 

সেজন্য সব সময় যে বিষয়টি মনে রাখবেন সেটি হচ্ছে, অডিয়েন্সদের ভিন্ন ধরনের অ্যাড দেখাতে হবে অথবা ভিন্ন অডিয়েন্স গ্রুপে অ্যাড দেখাতে হবে। 

তাহলে কিভাবে আপনি এ কাজগুলো করবেন যা আপনার ক্যাম্পেইনটিকে অ্যাড ফ্যাটিগ জনিত সমস্যা থেকে মুক্তি দেবে? 

অ্যাড ক্রিয়েটিভ পরিবর্তন করুন

প্রথমত আপনি যেটি করতে পারেন সেটি হচ্ছে ক্যাম্পেইনটি জন্য যে অ্যাড ক্রিয়েটিভ চালু রেখেছেন সেটি পরিবর্তন করুন। 

অ্যাড ক্রিয়েটিভ পরিবর্তন করতে হলে আপনাকে যা করতে হবে তা হচ্ছে ক্যাম্পেইন এবং অ্যাড সেট ঠিক রেখে অ্যাডটি ডুপ্লিকেট করে নিন।

 

এবারে ডুপ্লিকেট করা অ্যাডে সম্পূর্ণ নতুন একটি অ্যাড ক্রিয়েটিভ যুক্ত করে পাবলিশ করুন এবং পুরনো অ্যাডটি অফ করুন। 

এতে করে একটি নির্দিষ্ট ক্যাম্পেনের টার্গেট অডিয়েন্সগুলো পুরনো অ্যাড আর দেখতে পাবে না পরিবর্তে নতুন অ্যাড দেখবে। 

অ্যাড সেটে পরিবর্তন নিয়ে আসুন

অ্যাড ফ্যাটিগ থেকে মুক্তি পেতে অ্যাড টার্গেটিং পরিবর্তন করে দেখতে পারেন। এক্ষেত্রে ক্যাম্পেইন এবং অ্যাড ঠিক রেখে অ্যাড সেটের টার্গেটিংগুলো পরিবর্তন করুন।

এজন্য অ্যাড সেট ডুপ্লিকেট করে নিয়ে টার্গেটিংগুলো বা টার্গেটিং কিওয়ার্ডগুলো পরিবর্তন করে নেবেন। এতে করে যে দর্শক গুলো আপনার অ্যাড দেখছিল তারা বাদে নতুন একটি অডিয়েন্স গ্রুপ অ্যাড দেখবে। এসময় আগের অ্যাড সেট অফ করে দিবেন।  

এছাড়াও লুকালাইক অডিয়েন্স তৈরি করে অ্যাড সেটে পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারেন। 

ক্যাম্পেইন অবজেক্টিভ পরিবর্তন করুন 

অ্যাড ফ্যাটিগ থেকে মুক্তি পাবার আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে ক্যাম্পেইন অবজেক্টিভ পরিবর্তন করা। এক্ষেত্রে অ্যাড সেট এবং অ্যাড ঠিক থাকবে শুধুমাত্র ক্যাম্পেইন অবজেক্টিভ পরিবর্তন হবে।

এটি করার জন্য ক্যাম্পেইনটি ডুপ্লিকেট করে নিবেন এবং সে ক্যাম্পেইনের জন্য অ্যাড সেট এবং অ্যাড গুলো আগের মতই থাকবে অর্থাৎ কোন ভ্যারিয়েবলের পরিবর্তন করবেন না।

ধরুন ক্যাম্পেইন অবজেক্টিভ ছিলো রিচ  সেটি পরিবর্তন করে  পোস্ট এঙ্গেজমেন্ট অবজেক্টিভ সিলেক্ট করুন।

এজন্য ক্যাম্পেইন ডুপ্লিকেট করে শুধু অবজেক্টিভ পরিবর্তন করে পাবলিশ করে দিবেন। 

অফারে পরিবর্তন আনুন 

আরো একটি পরিবর্তন আপনাকে অ্যাড ফ্যাটিগ থেকে মুক্তি দিতে পারে সেটি হচ্ছে আপনি অ্যাড এর মাধ্যমে যা অফার করছেন সে অফারটি পরিবর্তন অথবা পরিমার্জন করুন।

এই ক্ষেত্রে টার্গেট অডিয়েন্স ভিন্ন ম্যাসেজ পাবে। অর্থাৎ একটা ফ্রেশ অ্যাড দেখবে ফলে তার সাথে এঙ্গেজ হওয়ার পরিমাণ বাড়বে যা ক্লিক-থ্রু-রেট আরো বাড়িয়ে তোলার মাধ্যমে অ্যাড ফ্যাটিগ থেকে মুক্তি পাবে। 

অ্যাড ক্রিয়েটিভের রঙের পরিবর্তন

অ্যাড ফ্যাটিগ থেকে মুক্তি পাবার জন্য আরও একটি সহজ উপায় হচ্ছে ক্যাম্পেইন, অ্যাড সেট অথবা অ্যাডে বড় ধরনের পরিবর্তন না করই শুধুমাত্র অ্যাড ক্রিয়েটিভের রঙের পরিবর্তন করার মাধ্যমে একটা রিফ্রেশ অ্যাড তৈরি করা।

যে অ্যাডটি কাস্টমার দেখতে দেখতে বিরক্ত তারা যখন সেই স্থানে সম্পূর্ণ ভিন্ন রঙের একটি অ্যাড দেখবে, তখন মনে করবে এটি নতুন কিছু। 

তখন তারা সেটির সাথে যুক্ত হবে যা এঙ্গেজমেন্ট বৃদ্ধি করবে ও আপনার ক্লিক-থ্রু-রেট বাড়িয়ে তুলবে। এক্ষেত্রে ফ্রিকোয়েন্সি যদি বেশি হয়ে থাকে সেটি সমস্যা হবে না। কারণ অডিয়েন্স সর্বোচ্চসংখ্যক বার অ্যাড দেখার পরেও সেটির সাথে যুক্ত হচ্ছে।  এই ক্ষেত্রে কোন সমস্যা নেই। 

অ্যাড ক্রিয়েটিভের টেক্সট পরিবর্তন করুন 

অ্যাডের রং পরিবর্তন না করে গ্রাফিকের মধ্যে টেক্সটগুলোর পরিবর্তন করার মাধ্যমে আপনি অ্যাড ফ্যাটিগ কাটিয়ে উঠতে পারেন। অডিয়েন্স যখন নতুন একটি ম্যাসেজ পাবে তখন অ্যাডের সাথে যুক্ত হবে। 

কারণ পূর্বের এবং পরের অ্যাডের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে যে সম্পর্কে তারা জানতে আগ্রহী। 

অ্যাড ফরম্যাট পরিবর্তন করুন 

অ্যাড ফরম্যাট পরিবর্তন করার মাধ্যমেও অ্যাড ফ্যাটিগ কাটিয়ে উঠা যায়। এজন্য ক্যাম্পেইন এবং অ্যাড সেট ঠিক রেখে অ্যাডটিকে ডুপ্লিকেট করবেন। এরপরে আপনি যদি “ইমেজ অ্যাড” ব্যবহার করে থাকেন তাহলে সেটি পরিবর্তন করে “ভিডিও অ্যাড” যুক্ত করবেন এবং সেটি পাবলিশ করবেন একই সাথে পূর্বে অ্যাড অফ করে দিবেন। 

এক্ষেত্রে মানুষ সম্পূর্ণ নতুন ফরম্যাটে কনটেন্ট পাবে যার ফলে অ্যাডের সাথে যুক্ত হবার প্রবণতা বেড়ে যাবে যা অ্যাড ফ্যাটিগ কাটিয়ে উঠতে সহায়ক।

কল টু অ্যাকশন এর পরিবর্তন

ধরুন, কোনো একটি অ্যাডে লার্ন মোর কল-টু-অ্যাকশন দেওয়া আছে। আপনি সেটি পরিবর্তন করে “সাইন আপ” বা “সাবস্ক্রাইব” ইত্যাদি ধরনের কল-টু-অ্যাকশন ব্যবহার করতে পারেন। 

কল-টু-একশনের পরিবর্তনের ফলে অডিয়েন্সের মধ্যে কনটেন্ট এর সাথে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছাটা পরিবর্তিত হয়। এতে কিছু অডিয়েন্স যারা সঠিক কল-টু-অ্যাকশন খুঁজছিলো বা তাদের পছন্দের কল-টু-অ্যাকশন খুঁজছিলো সেটি তারা খুঁজে পায়। ফলে অ্যাডে যুক্ত হয়। আর এটি অ্যাড ফ্যাটিগ সমস্যাকে কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। 

পরিশেষে,

অডিয়েন্সদের নিত্য নতুন অ্যাড উপহার দেবার মাধ্যমে তাদের এঙ্গেজ করা জরুরি। তবে একই অ্যাড বার বার দেখিয়ে তাদের বিরক্ত করা ঝুঁকিপূর্ণ।

যখন খেয়াল করবেন আপনার অ্যাডের ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ছে কিন্তু ক্লিক-থ্রউ-রেট বাড়ার পরিবর্তে কমছে তখন সতর্ক হন। উপরে আলোচনা করা কৌশলগুলো প্রয়োগ করুন। এতে করে আপনি খুব দ্রুত অ্যাড ফ্যাটিগ সমস্যার সম্মুখীন হবার আগেই তার প্রতিকার করতে সক্ষম হবেন।  

আপনি কি মনে করেন? আপনি কি অ্যাড ফ্যাটিগ মোকাবেলায় এই কৌশলগুলি ব্যবহার করেন? আপনি কি সবার সাথে নতুন কোনো কৌশল শেয়ার করতে চান? আপনার চিন্তা জানিয়ে কমেন্ট করুন। 

আরো পড়ুনঃ

কখন ও কিভাবে ফেসবুক অ্যাডের জন্য “রিচ অবজেক্টিভ” ব্যবহার করবেন

ভুমিকাঃ

ফেসবুক অ্যাড ম্যানেজারের অ্যাড অবজেক্টিভগুলোর প্রথমে রয়েছে ব্র্যান্ড অ্যাওয়ারনেস এবং রিচ অবজেক্টিভ।এটি থেকে অনেকে অনুমান করতে পারেন ফেসবুক মার্কেটিং এর শুরুর দিকে ব্র্যান্ড অ্যাওয়ারনেস তৈরি বা কাস্টমারদের কাছে প্রোডাক্টগুলো পরিচিত করানোর জন্য এই অবজেক্টিভগুলো ব্যবহার করা হয়। বিষয়টি কি শুধুই তাই?

ফেসবুক অ্যাড অবজেক্টিভগুলোর রয়েছে বহুমাত্রিক ব্যবহার পদ্ধতি। কিভাবে এই অবজেক্টিভগুলো ব্যবহার করবেন সেটি বিজনেসের লক্ষ্য ও কাস্টমারদের আচরণের উপর নির্ভর করে নির্ণয় করতে হয়।

Summary
ফেসবুক অ্যাড অপটিমাইজেশনঃ অ্যাড ফ্যাটিগ কি?  কিভাবে এই সমস্যা কাটিয়ে উঠবেন
Article Name
ফেসবুক অ্যাড অপটিমাইজেশনঃ অ্যাড ফ্যাটিগ কি? কিভাবে এই সমস্যা কাটিয়ে উঠবেন
Description
আজ আলোচনা করবো অ্যাড ফ্যাটিগ বিষয়ে তবে তার আগে কিছু প্রশ্ন, আপনার একটি সফল ফেসবুক অ্যাড ক্যাম্পেইন কি ধীরে ধীরে তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলছে? অ্যাড খরচ বেড়ে যাচ্ছে কিন্তু তার বিপরীতে সেল হচ্ছে না। কাস্টমার অ্যাড দেখে আর আগের মতো সাড়া দিচ্ছে না?  আপনি সম্ভবত অ্যাড ফ্যাটিগ জনিত সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। 
Author
Publisher Name
DeshiCommerce Blog
Publisher Logo
এই পোস্টটি শেয়ার করতে ক্লিক করুনঃ

Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

ইকমার্স সম্পর্কিত বিভিন্ন টিপস এবং নিউজ পেতে আমাদের সাথে থাকুন

* indicates required