ব্র্যান্ড পজিশনিং দ্বারা কাস্টমারদের মনে ব্র্যান্ডের ইউনিক ইমেজ তৈরীর কৌশল

ইফেকটিভ ব্র‍্যান্ড পজিশনিং এর কারণে ইলেকট্রিক গাড়ির ব্র‍্যান্ড নিয়ে আলোচনা হলে টেসলার নাম কেন শুরুর দিকে থাকে? একটি  ব্র্যান্ডকে শূন্য থেকে সাকসেসফুল পজিশনে নিয়ে যেতে ব্র‍্যান্ড পজিশনিং আবশ্যিক। SME বিজনেস গুলো এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয় না। ব্র্যান্ড পজিশনিং এর গুরুত্ব সম্পর্কে বোঝাতে গিয়ে স্বনামধন্য বিজনেস আইকন ওয়ারেন বাফেট বলেছিলেন, “It takes 20 years to build a reputation and five minutes to ruin it.”

আজকের লেখায় থাকছে ব্র্যান্ড পজিশনিং কি, এটি কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ এবং কিভাবে আপনারা ব্র্যান্ড পজিশনিং করতে পারবেন সে সম্পর্কিত ডিসকাশন।

ব্র্যান্ড পজিশনিং কি?

শুরুতেই জানবো ব্র্যান্ড পজিশনিং বলতে কি বোঝানো হয়। একদম সহজ বাংলায় ব্র্যান্ড পজিশনিং হচ্ছে কাস্টমারদের মাইন্ডে নিজের ব্র্যান্ডের একটি কনসেপ্ট বা ইমেজ ক্রিয়েট করে দেওয়া, যাতে করে সেটির মাধ্যমেই কাস্টমাররা ওই ব্র‍্যান্ডটিকে চিনতে পারেন। 

আপনাদের এখন মনে হতে পারে ব্র্যান্ড পজিশনিং বলতে হয়তো কোন ব্র্যান্ডের লোগো, ট্যাগলাইন কিংবা মার্কেটিংকে বোঝানো হয়ে থাকে। কিন্তু আসলে ব্যাপারটি সেরকম নয়। 

ব্র্যান্ড পজিশনিং হচ্ছে এমন একটি প্রসেস যেটির মাধ্যমে কোনো একটি ব্র্যান্ডকে সেটির যে কম্পিটিটর ব্র্যান্ডগুলো রয়েছে সেগুলো থেকে সম্পূর্ণ ডিফারেন্ট ভাবে কাস্টমারদের সামনে প্রেজেন্ট করা হয়। এই কাজটি করা হয় সে ব্র‍্যান্ডের প্রোডাক্টের ইউনিক ফিচার ও বেনিফিট হাইলাইট করার মাধ্যমে। 

একটি ব্র্যান্ড যখন সাকসেসফুলি ব্র্যান্ড পজিশনিং করতে পারে, তখন সেই ব্র্যান্ড কাস্টমারদের কাছে প্রোপার ভ্যালু ও ক্রেডিবিলিটি পায়।  তখন সেই ব্র‍্যান্ডের রেপুটেশন ও রেভিনিউও সমানতালে বাড়তে থাকে।

উদাহরণের সাহায্যে বোঝার চেষ্টা করি

চলুন ছোট্ট একটি উদাহরণের সাহায্যে ব্র্যান্ড পজিশনিংয়ের মূল আইডিয়াটি বোঝার চেষ্টা করি। কোকাকোলা আমাদের সবার প্রিয় সফট ড্রিংক? এই কোকাকোলা যখন প্রথম লঞ্চ করা হয়, তখন মার্কেটে আর অন্য কোনো কোলা বেজড সফট ড্রিংক পাওয়া যেতোনা। 

তাই স্বাভাবিকভাবেই যখন কোকাকোলা মার্কেটে আসে, তখন তা কম সময়েই কাস্টমারদের মন জয় করে নেয়। কোকাকোলা তখন নিজের ব্র‍্যান্ড পজিশনিংয়ের স্ট্র‍্যাটেজি এমনভাবে ডেভেলপ করতে শুরু করে, যাতে করে টার্গেটেড কাস্টমারদের মনে পারমানেন্টলি এই ব্র‍্যান্ডের একটি ইমেজ সেট হয়ে যায়। 

এর ইমপ্যাক্ট কি? 

আজ এত বছর পরেও দোকানে কোলা বেজড ড্রিংক খোঁজার সময় আমরা সবসময় কোকাকোলা ই খুঁজি। কারণ কোকাকোলা সেটির ব্র‍্যান্ড পজিশনিংয়ের মাধ্যমে আমাদের কাছে নিজেদের একটি স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করতে পেরেছে। আমরা এখন বিলিভ করি কোকাকোলার চাইতে বেটার টেস্ট ও কোয়ালিটির সফট ড্রিংক অন্য কোনো ব্র‍্যান্ড তৈরি করেনা৷ তাই কোকাকোলা ছাড়াও অন্য আরো অনেক সফট ড্রিংক ব্র‍্যান্ড মার্কেটে  অ্যাভেইলেবল থাকলেও অধিকাংশ কাস্টমার কোকাকোলাই বেছে নেই৷ কি? বুঝতে পারলেন ব্র‍্যান্ড পজিশনিং একটি ব্র‍্যান্ডকে সাকসেসফুল করে তুলতে কতটুকু পাওয়ারফুল রোল প্লে করে?

ব্র্যান্ড পজিশনিং কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ? 

প্রথমত ব্র্যান্ড পজিশনিং অন্যান্য কম্পিটিটর ব্র‍্যান্ডের তুলনায় নিজের ব্র্যান্ডটি কেন বেটার প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস অফার করে সেটি টার্গেটেড কাস্টমারদের কাছে প্রেজেন্ট করে। কাস্টমাররা বুঝতে পারেন যে এই ব্র্যান্ডের প্রোডাক্টগুলো ইউনিক এবং এগুলো নিশ্চিন্তে পারচেজ করা যেতে পারে। 

এতে করে ব্র্যান্ড ভ্যালু যেমন বাড়ে, তেমনি ভাবে আগের তুলনায় অনেক বেশি কাস্টমারের কাছে রিচ করা যায়। শুধু তাই নয়, ব্র্যান্ড পজিশনিংয়ের মাধ্যমে কোন ব্র্যান্ডের প্রাইসিং স্ট্র্যাটেজিও জাস্টিফাই  করা সম্ভব হয়। 

কিভাবে? 

আপনি ও আপনার কম্পিটিটর ব্র্যান্ড উভয়ের প্রোডাক্ট সেইম। ধরুন, প্রোডাক্টটি হচ্ছে মেয়েদের ফেসওয়াশ। যদি আপনার ব্র্যান্ডের ফেসওয়াশ ফেস ক্লিন করার পাশাপাশি স্কিনের বিভিন্ন প্রবলেম যেমনঃ একনি বা হাইপারপিগমেন্টেশন দূর করতে পারে যা আপনার কম্পিটিটর ব্র্যান্ডের ফেসওয়াশ পারে না, তাহলে আপনার ব্র্যান্ডের ফেসওয়াশই বেশিরভাগ কাস্টমাররা কিনবে৷

কারণ আপনি আপনার কম্পিটিটরের তুলনায় নিজের প্রোডাক্টে এমন কিছু ইউনিক ফিচার কাস্টমারদের অফার করছেন, যা তাদেরকে এডিশনাল বেনিফিট দিচ্ছে।

আবার যদি আপনার প্রোডাক্টের প্রাইস অন্য ব্র্যান্ডগুলোর প্রোডাক্টের তুলনায় বেশি হয়, তাহলে কাস্টমাররা মনে করেন আপনার ব্র‍্যান্ডের প্রোডাক্টের কোয়ালিটি বাকি ব্র‍্যান্ডগুলোর তুলনায় অনেক ভালো। একারণেই প্রাইস কিছুটা বেশি হলেও তারা বেশি প্রাইসেই প্রোডাক্টটি পারচেজ করে। একটি ব্র্যান্ডকে স্ট্রং ও স্টেবল পজিশনে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাস্টমারদের মনে আপনার ব্র্যান্ডের পজিশন কোথায় সেটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর।

ব্র‍্যান্ড পজিশনিং স্ট্র্যাটেজির প্রকারভেদ

ব্র্যান্ড পজিশনিং করার জন্য স্পেসিফিক স্ট্র্যাটেজি ফলো করতে হয়। তবে সব ব্র্যান্ড কিন্তু একই ধরনের ব্র্যান্ড পজিশনিংয়ের স্ট্র্যাটেজি ফলো করেনা। বরং ব্র্যান্ডের ধরণ এবং কি ধরনের প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস কাস্টমারদের অফার করা হচ্ছে তার ওপর ভিত্তি করে ব্র্যান্ড পজিশনিং বিভিন্ন রকমের হতে পারে। যেমন- 

১। কাস্টমার সার্ভিস পজিশনিং স্ট্র‍্যাটেজি

কাস্টমার সার্ভিস পজিশনিং স্ট্র্যাটেজি হচ্ছে যখন কোনো ব্র্যান্ড সেটির কাস্টমার সার্ভিস সিস্টেম ডেভেলপ করার মাধ্যমে নিজের ব্র্যান্ডের ইউনিক পজিশনিং করে। এই স্ট্র্যাটেজিতে কাস্টমারদেরকে সবসময় প্রায়োরিটি দেয়া হয় এবং তাদের যে কোন প্রবলেম বা কোয়েরি সবচেয়ে কম সময় সলভ করার চেষ্টা করা হয়,  যাতে করে কাস্টমারদের মনে সেই ব্র্যান্ড সম্পর্কে  পজিটিভ ইম্প্রেশন তৈরি হয়। 

যেমনঃ ই-কমার্সের জন্য বিখ্যাত প্ল্যাটফর্ম আমাজন সবসময় টপ নচ কাস্টমার সার্ভিস প্রোভাইড করে থাকে। এ কারণেই সারা বিশ্বের বহু মানুষ কেনাকাটা করার জন্য আমাজনকে চোখ বন্ধ করে ভরসা করে থাকেন।

২৷ কোয়ালিটি বেজড পজিশনিং স্ট্র্যাটেজি

যখন ব্র্যান্ড পজিশনিংয়ের স্ট্র্যাটেজি কোয়ালিটি বেজড হয়, তখন একটি ব্র্যান্ড সেটির প্রোডাক্টের কোয়ালিটি মেইনটেইন করতে বেশি ফোকাস করে থাকে। যেসব ব্র্যান্ডে কোয়ালিটি বেজড পজিশনিং স্ট্র্যাটেজি ফলো করা হয়ে থাকে, তাদের টার্গেটেড কাস্টমার সাধারণত এমন মানুষ হয়ে থাকেন, যারা বেশি প্রাইস দিয়ে হলেও কোয়ালিটিসম্পন্ন প্রোডাক্ট পারচেজ করতে দ্বিধাবোধ করেননা। এ কারণে এই স্ট্র‍্যাটেজি ফলো করা ব্র‍্যান্ডের প্রোডাক্টগুলো বেশ প্রাইসি হয়ে থাকে। 

যেমনঃ আমরা যদি জনপ্রিয় ফ্যাশন ও লাইফ স্টাইল ব্র‍্যান্ড আড়ংয়ের দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাবো আড়ংয়ের প্রোডাক্টের প্রাইস কিছুটা বেশি হলেও কিন্তু এই ব্র্যান্ডের কাস্টমারের অভাব নেই। কারণ এটি সবসময় হাই কোয়ালিটির আউটফিট এবং অন্যান্য প্রোডাক্ট যেমনঃ জুতা, ব্যাগ, জুয়েলারি, হোম ডেকোর আইটেম বা স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টস কাস্টমারদের প্রোভাইড করে থাকে।

 ৩। সোশ্যাল মিডিয়া পজিশনিং স্ট্রাটেজি

সোশ্যাল মিডিয়া পজিশনিং স্ট্র্যাটেজিতে একটি ব্র্যান্ড সেই সকল সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেলগুলো পজিশনিংয়ের জন্য ব্যবহার করে, যেগুলো সেই ব্র্যান্ডের টার্গেটেড অডিয়েন্স সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে থাকে। টার্গেট অডিয়েন্সদের ব্যবহার করা সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেল আইডেন্টিফাই করার পর সেই চ্যানেলগুলোতে ব্র‍্যান্ডের প্রোফাইল ক্রিয়েট করা হয়। তারপর সেই প্রোফাইলে কোয়ালিটিসম্পন্ন কনটেন্ট পোস্ট করা হয়, যাতে করে  যারা পটেনশিয়াল কাস্টমার তাদেরকে অ্যাট্রেক্ট করা সম্ভব হয়।  

তারপর সেখান থেকে ধীরে ধীরে সেল জেনারেট হওয়া শুরু হয়৷ টার্গেটেড কাস্টমারদের কোনো ব্র্যান্ডের সাথে এনগেইজ করার জন্য এই স্ট্র্যাটেজি ব্যবহার করা হয়। যেমনঃ ডাভ সাবানের নামতো সবাই শুনেছেন। ডাভ নিজের ব্র্যান্ড পজিশনিংয়ের জন্য বিভিন্ন গ্রুপকে টার্গেট করে সোশ্যাল মিডিয়াতে বিভিন্ন ক্যাম্পেইন রান করে থাকে। একারণেই ডাভ এত জনপ্রিয় এবং এর কাস্টমারের সংখ্যা এত বেশি।

৪। প্রাইস বেজড পজিশনিং স্ট্র্যাটেজি

একটি ব্র্যান্ড সেটির প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিসকে অন্যান্য কম্পিটিটরের তুলনায় সবচেয়ে অ্যাফোর্ডেবল প্রমাণ করার জন্য প্রাইস বেজড পজিশনিং স্ট্র‍্যাটেজি ব্যবহার করে থাকে। এই স্ট্র‍্যাটেজি সঠিকভাবে কাজে লাগানো গেলে সাকসেস রেট খুব বেশি হয়, কারণ অ্যাফোর্ডেবল প্রাইসের প্রোডাক্ট সবাই ব্যবহার করতে পছন্দ করেন। 

কিন্তু একই সাথে এখানে একটি বড় রিস্ক থাকে। সেটি হলো যখন প্রোডাক্টের প্রাইস কম থাকে, তখন সেটির কোয়ালিটি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। অনেক সময় আপনারা বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে যে কম টাকায় অনেকগুলো আইটেমের  অফার দেখতে পান, সেটি প্রাইস বেজড পজিশনিং স্ট্র্যাটেজির এক্সাম্পল৷ এসব খাবারের দাম অ্যাফোর্ডেবল ঠিকই, কিন্তু খাবারের কোয়ালিটি কতটুকু মেইনটেইন করা হয় সেই বিসয়ে কাস্টমারদের মনে সন্দেহের উদ্রেগ হতে পারে।

ব্র্যান্ড পজিশনিং কিভাবে করা যায়? 

১। নিজের বর্তমান পজিশনিং আইডেন্টিফাই করা

সঠিকভাবে ব্র্যান্ড পজিশনিং করা কখনোই সম্ভব নয় যদি একটি ব্র‍্যান্ড বুঝতেই না পারে যে সেটি বর্তমানে কোন পজিশনে রয়েছে। কারণ বর্তমান পজিশন বুঝে সে অনুযায়ী পজিশনিংয়ের স্ট্র্যাটেজি বিল্ডআপ করতে হয়। একারণে শুরুতেই বোঝার চেষ্টা করুন আপনার ব্র্যান্ডকে কাস্টমার কিভাবে দেখে। 

এখন প্রশ্ন হলো এটি বুঝবেন কিভাবে? 

এটি বোঝার জন্য শুরুতেই আপনার টার্গেট অডিয়েন্স কারা তা ডিফাইন করুন। টার্গেট অডিয়েন্স হচ্ছে সেসব মানুষ যাদেরকে টার্গেট করে আপনার ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট ডিজাইন করা হয়। 

এরপর আপনার কাস্টমার কারা সেটি আইডেন্টিফাই করুন এবং দেখুন যে তারা আপনার টার্গেট অডিয়েন্সের সাথে যাচ্ছে কিনা। একইসাথে  কাস্টমারদের সামনে আপনার ব্র্যান্ড ভ্যালু বা ইমেজ কতটুকু সেটিও বোঝার চেষ্টা করুন। কাস্টমার ফিডব্যাক বা সার্ভে দ্বারা বুঝতে পারবেন যে আপনার বর্তমান ব্র্যান্ড পজিশনিং কতটুকু শক্তিশালী অবস্থায় রয়েছে।

২। কম্পিটিটর অ্যানালাইসিস করা

ইফেকটিভ ভাবে ব্র্যান্ড পজিশনিং করতে হলে যে কাজটি অবশ্যই করতে হবে সেটি হচ্ছে কম্পিটিটর অ্যানালাইসিস। এটি করতে হলে আপনার ব্র্যান্ডের যে কম্পিটিটর ব্র‍্যান্ডগুলো রয়েছে সেগুলোর মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি, সোশাল মিডিয়া প্রেজেন্স,  কাস্টমার সার্ভিস ইত্যাদি সম্পর্কে রিসার্চ করুন৷  

এক্ষেত্রে নিজ ও  কম্পিটিটর ব্র্যান্ডগুলোর SWOT অ্যানালাইসিস করা আবশ্যক৷ এটি করার মাধ্যমে নিজের ও কম্পিটিটরদের স্ট্রেন্থ, উইটনেস, অপোরচুনিটি ও থ্রেট  বুঝতে পারবেন। তারপর সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে তুলনা করে বুঝতে পারবেন যে আপনার ব্র্যান্ডের পজিশন ঠিক কোথায়।

৩। নিজের ব্র্যান্ডের ইউনিক দিকগুলো আইডেন্টিফাই করা

কম্পিটিটর অ্যানালাইসিস করার পর আপনি  আইডিয়া পেয়ে যাবেন আপনার ব্র‍্যান্ডের পজিশন সম্পর্কে। তাই এরপরের স্টেপটি হচ্ছে নিজের ব্র্যান্ডের ইউনিক ফিচারগুলো ফাইন্ড আউট করে ফেলা। সবসময় মনে রাখবেন ব্র্যান্ড পজিশনিং করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্টেপটি হচ্ছে নিজের ব্র্যান্ডের যে ইউনিক ফিচারগুলো রয়েছে সেগুলো কাস্টমারদের সামনে প্রেজেন্ট করা৷ কারণ ওই ইউনিক ফিচারগুলোর মাধ্যমেই কাস্টমারদের মনে সেই ব্র্যান্ডের কনসেপ্ট বা ইমেজ ক্রিয়েট হয়৷  

এক্ষেত্রে হতেই পারে যেগুলো আপনার কম্পিটিটরের উইকনেস সেগুলোই হয়তো আপনার ব্র্যান্ডের স্ট্রেন্থ। যদি এমন হয় তাহলে সেই স্ট্রেন্থ কাজে লাগাতে হবে। এই ধাপে একইসাথে ডিসাইড করে ফেলুন যে কোন ধরণের ব্র‍্যান্ড পজিশনিংয়ের স্ট্র‍্যাটেজি ফলো করবেন। যে চার ধরণের স্ট্র‍্যাটেজির ব্যাপারে উল্লেখ করেছি চাইলে সেখান থেকে নিজের স্ট্রেন্থ অনুযায়ী একটি বেছে নিতে পারেন।

৪। ব্র্যান্ড পজিশনিং স্টেটমেন্ট ক্রিয়েট করা

প্রশ্ন হচ্ছে, “ব্র্যান্ড পজিশনিং স্টেটমেন্ট কি? ” ব্র্যান্ড পজিশনিং স্টেটমেন্ট  এক ধরণের স্পেশাল ডকুমেন্ট। এই ডকুমেন্টে কোনো একটি ব্র‍্যান্ডের পজিশনিংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমন কিছু তথ্য বিদ্যমান থাকে। এটি  কোম্পানির মিশন, ভিশন এবং ফিউচার কন্ট্রিবিউশন বিষয়ে কাস্টমারদের পরিষ্কার তথ্য দেয়। 

ব্র‍্যান্ড পজিশনিং স্টেটমেন্টে কোনো ব্র‍্যান্ডের টার্গেট অডিয়েন্স কারা সে সম্পর্কে ডিটেইলে মেনশন করা হয়। পাশাপাশি সেই ব্র‍্যান্ডের প্রোডাক্টের ইউনিক ফিচার ও কিভাবে সেই প্রোডাক্টটি কাস্টমারদের বেনিফিট এনে দিতে পারে সেগুলোও ইনক্লুড করা হয়৷ একইসাথে এই অফার করা বেনিফিটগুলোর অথেন্টিসিটি নিশ্চিত করে।এই স্টেটমেন্ট বানানোর সময় একজন পটেনশিয়াল কাস্টমারের মনে সেই ব্র্যান্ড সম্পর্কে যেসব প্রশ্ন আসতে পারে সেগুলো মাথায় রেখেই এই স্টেটমেন্ট ডিজাইন করা হয়।

৫। ব্র‍্যান্ড পজিশনিংয়ের জন্য কাজ শুরু করা 

ব্র্যান্ড পজিশনিং একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। এর গাইড লাইন একবার রেডি হয়ে যাবার পরে সে গাইডলাইন ফলো করে স্টেপ বাই স্টেপ কাজ করতে হবে। প্রতিটি স্টেপ এর জন্য কেপিআই নির্ধারণ করবেন।  নির্দিষ্ট সময় পর পর ব্র্যান্ডের অবস্থান সম্পর্কে ধারণা পেতে কৌশল ওগাইড লাইন রিভিউ করতে পারেন।  খেয়াল রাখবেন আপনার ব্রান্ডের কার্যক্রম যেন কোনোভাবেই আপনার কমিটমেন্টকে প্রশ্নবিদ্ধ না করে।

পরিশেষে

এখন ব্র্যান্ড পজিশনিং সাকসেসফুল কিনা সেটি কিভাবে বুঝবেন? এটি বোঝার জন্য কাস্টমারদের দিকে তাকাতে হবে। যদি দেখতে পান কাস্টমাররা আপনার ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট আগের চাইতে বেশি পারচেজ করছে, তাহলে বুঝতে হবে আপনার ব্র্যান্ড পজিশনিং সাকসেসফুল। এছাড়াও যদি দেখতে পান ব্র্যান্ডের মার্কেটিং ক্যাম্পেইনগুলো আগের থেকে বেশি সাকসেস পাচ্ছে, তাহলেও ব্র্যান্ড পজিশনিং সঠিক পথে আছে  বলে ধরে নেয়া হয়।

ব্র্যান্ড পজিশনিং নিয়ে আমেরিকান উদ্যোক্তা ও লেখিকা Lisa Gansky এর এই উক্তিটি ব্র্যান্ড পজিশনিং এর মর্মার্থ কে যথার্থ ভাবে উপস্থাপন করে,  “A brand is a voice and a product is a souvenir”

Summary
ব্র্যান্ড পজিশনিং দ্বারা কাস্টমারদের মনে ব্র্যান্ডের ইউনিক ইমেজ তৈরীর কৌশল
Article Name
ব্র্যান্ড পজিশনিং দ্বারা কাস্টমারদের মনে ব্র্যান্ডের ইউনিক ইমেজ তৈরীর কৌশল
Description
ব্র্যান্ড পজিশনিং হচ্ছে এমন একটি প্রসেস যেটির মাধ্যমে কোনো একটি ব্র্যান্ডকে সেটির যে কম্পিটিটর ব্র্যান্ডগুলো রয়েছে সেগুলো থেকে সম্পূর্ণ ডিফারেন্ট ভাবে কাস্টমারদের সামনে প্রেজেন্ট করা হয়। এই কাজটি করা হয় সে ব্র‍্যান্ডের প্রোডাক্টের ইউনিক ফিচার ও বেনিফিট হাইলাইট করার মাধ্যমে। একটি ব্র্যান্ড যখন সাকসেসফুলি ব্র্যান্ড পজিশনিং করতে পারে, তখন সেই ব্র্যান্ড কাস্টমারদের কাছে প্রোপার ভ্যালু ও ক্রেডিবিলিটি পায়।
Author
Publisher Name
DeshiCommerce Blog
Publisher Logo
এই পোস্টটি শেয়ার করতে ক্লিক করুনঃ

Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

ইকমার্স সম্পর্কিত বিভিন্ন টিপস এবং নিউজ পেতে আমাদের সাথে থাকুন

* indicates required