ফেসবুক মার্কেটিং এ সেলস বা বিক্রয় ফানেল কী এবং কিভাবে কাজ করে?

সেলস ফানেল বিষয়ে বিস্তারিত বোঝানোর জন্য একটি গল্প বলি,

আমার বন্ধু রকি, শীতকালে তার বাবার ঠান্ডা পানিতে অনেক কষ্ট হয়। তাই সে চিন্তা করলো এবার শীতে সে তার বাবার জন্য সবসময় গরম পানির ব্যবস্থা করবে।

সে ফেসবুক ও গুগলে সার্চ করে প্রাথমিক ধারনা নেবার চেষ্টা করলো এবং কিছু গিজারের বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক পেজে সে লাইক দিয়ে রাখলো। 

কয়েকদিন পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় কাটানোর মুহূর্তে তার চোখে পড়লো ABC কোম্পানির গিজারের বিজ্ঞাপন।সে যেহেতু তার গরম পানির জন্য গিজার প্রয়োজন, সে বিজ্ঞাপনটি দেখে আগ্রহী হল এবং সেই কোম্পানির ফেসবুক পেজে কিছু ভালো লাগা পোস্টে লাইক দিলো।  

এর একদিন পরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ABC কোম্পানির গিজারের অ্যাড সে তাঁর নিউজফিডে দেখতে পেল। এরপর সে অ্যাডে ক্লিক করে গিজার নিয়ে আরও তথ্য জানতে সে তাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করলো। সেখানে আরও তথ্য জানতে রকি তাঁর ইমেল দিয়ে ABC গিজার কোম্পানির নিউজলেটার  সাবস্ক্রাইব করে রাখলো।

পরের দিন থেকেই রকি নিয়মিত ভাবে সেই গিজার বিক্রয়কারী থেকে গিজার কিভাবে ব্যবহার করবে, ভালো গিজারের বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি? গিজারের বিদ্যুৎ খরচ কেমন? ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যবহুল ইমেল পাওয়া শুরু করলো।  সে আরও কয়েকটি কোম্পানিকে পছন্দের তালিকায় রেখেছিলো। কিন্তু হাতে টাকা কম থাকায় পরের মাসে কেনার সিদ্ধান্ত নিলো।

এমন সময় ABC গিজার কোম্পানি থেকে আকর্ষণীয় ডিস্কাউন্ট অফারের ইমেল পেলো। যেহেতু রকি সেই কোম্পানি সম্পর্কে জানে আর সে বাজেটের মধ্যে গিজার পাচ্ছে তাই সে সিদ্ধান্ত নিলো ABC কোম্পানি থেকেই সে গিজার কিনবে।  দুইদিন পরে সে তার পছন্দের গিজারটি সেই কোম্পানি থেকে অর্ডার করলো। 

রকির গিজার কেনার প্রক্রিয়াটা মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করবেন। সে একটি গিজারের বিজ্ঞাপন দেখার পরপরই অর্ডার করে নি। একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাবার পর সে পছন্দের গিজারটি অর্ডার করেছে।

এখানে গিজার বিক্রয়কারী ABC কোম্পানি তার প্রোডাক্ট বিক্রির জন্য একটি পরিকল্পিত ‘Sales path’ বিক্রয় রাস্তা তৈরি করে রেখেছিলো, যেখানে রকি নতুন কাস্টোমার হয়ে আসার পরে চূড়ান্ত ক্রেতা হিসেবে তাঁর জার্নি শেষ করেছে।

প্রোডাক্ট বা সার্ভিস সেল করার জন্য কাস্টমারদের পরিকল্পিত ক্রয় অভিজ্ঞতা প্রদানের যে প্রসেস একটি কোম্পানি নির্ধারণ করে রাখে সেটিকে বলা হয় সেলস ফানেল।

সেলস (Sales) বা বিক্রয় ফানেল কি?

সেলস ফানেল হলো সেই প্রতিটি পদক্ষেপ বা ধাপ, যা আপনার থেকে কেনাকাটা সম্পন্ন করার জন্য আপনার কাস্টমারকে নিতে হবে।

সেলস ফানেলের ভাগ

একজন কাস্টমার একটি বিজনেসের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া থেকে কেনাকাটার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া ও কেনাকাটা সম্পন্ন করা পর্যন্ত তিনটি স্তরে বিচরণ করে। 

এই তিন স্তর অনলাইন কিংবা অফলাইন প্রতিটি ক্ষেত্রেই সমান গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলো হচ্ছে,

সেলস ফানেলের ধাপ প্রথমে TOFU তারপর MOFU শেষে BOFU
সেলস ফানেল

TOFU (Top of the Funnel)

আপনার দোকানের সামনে দিয়ে হেটে যাওয়ার সামান্য কিছু মানুষ আপনার দোকানের ভেতরে ঢোকে। এই স্তরটি হল TOFU 

ই-কমার্স বিজনেস এর ক্ষেত্রে আপনার এড দেখে কিছু মানুষ আগ্রহী হয় এবং আরও জানার জন্য আপনার সোশ্যাল মিডিয়া বা অনলাইন প্লাটফর্ম গুলোর সাথে এঙ্গেজ হয়। 

MOFU (Middle of the funnel)

যে মানুষগুলো আপনার দোকানে বিভিন্ন প্রোডাক্টগুলো দেখছে বা কোন একটি নির্দিষ্ট পণ্যের দিকে নির্দেশ করে আপনাকে সেটা দেখাতে বলছে। সে প্রোডাক্টটির কোয়ালিটি, ইউজকেস ইত্যাদি  প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছে। এই স্তরটি কে বলা হয় Middle of the funnel. 

ই-কমার্স বিজনেস এর ক্ষেত্রে, কাস্টমারেরা আপনার অ্যাড দেখে আপনার সোশ্যাল মিডিয়া পেইজ অথবা ই-কমার্স ওয়েবসাইটে আসবে।  তারা বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্ট দেখবে, সে এসএমএস, ইমেইল, চ্যাট অথবা কমেন্টের মাধ্যমে আপনাকে জিজ্ঞাসা করবে। তারা কেনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আপনার ব্র্যান্ডকে পছন্দের তালিকায় রাখবে। 

BOFU

এখন কাস্টমার আপনার ব্র্যান্ড ও প্রোডাক্ট সম্পর্কে জানে এবং সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আপনার থেকে সে কিনবে। সে কেনাকাটায় অফার বা ডিস্কাউন্ট প্রত্যাশা করে। পরিশেষে সে আপনাকে প্রোডাক্ট প্যাক করতে বলে এবং কাউন্টারের দিকে এগিয়ে যায় টাকা পরিশোধ করার জন্য।এই স্তরটি কে বলা হয় Bottom of the funnel. 

ই-কমার্স এর ক্ষেত্রে, প্রোডাক্টটি কাস্টমারের পছন্দ হয়ে গেছে এবং সে এড টু কার্ট করে চেক আউট করবে।  

সেলস ফানেল কেন গুরুত্বপূর্ণ

আপনার ব্যবসার সেলস ফানেল বুঝে ফানেলর প্রতিতি স্তরে সঠিক সময়ে, সঠিক মানুষের কাছে, ডিজিটাল মার্কেটিং করতে পারলে আপনি সবচেয়ে কম খরছে সবচেয়ে ভাল ফলাফল পাবেন।

আপনি যখন সুনির্দিষ্ট ভাবে জানবেন কাস্টমার আপনার প্রোডাক্ট সম্পর্কে জানা থেকে কেনাকাটা সম্পন্ন করা পর্যন্ত কী ধরনের আচরণ করে। তখনই সেই মাফিক প্রয়োজনীয় তথ্যের বা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাকে কাস্টমারে পরিণত করতে পারবেন। 

ধরুন, একজন কাস্টমার শীতের জন্য জুতা কিনবে। আপনার দোকানে অথবা ওয়েবসাইটে এসেছে জুতো কেনার জন্য। 

কাস্টমার আসার পরপরই আপনি তাকে বললেন, কোন জুতোর দাম কত এবং কীভাবে সে টাকা পরিশোধ করবে।তাহলে কি সেই কাস্টমার আপনার থেকে জুতা কিনবে? যদি না কেনে, তবে কেন কিনলো না?

সকল কাস্টমারের প্রয়োজন সমান নাও হতে পারে। কেউ হয়তো শীতের সময় নিজের পা উষ্ণ রাখার জন্য জুতা কিনতে এসেছে। কেউ বা ব্যাডমিন্টন খেলার জন্য জুতা কিনতে চায়।কিন্তু আপনি সবাইকে জুতার মূল্য সম্পর্কে বলছেন।  তাহলে সে কখনোই জুতা কিনবে না।

আবার একইভাবে, যখন কেউ সুনির্দিষ্ট ভাবে এসেছে ব্যাডমিন্টন খেলার জন্য জুতা কিনতে, তাকে আপনি ফরমাল ব্যবহার করার জন্য বিভিন্ন ধরনের জুতো দেখাচ্ছেন। তাহলে সে কাস্টমার জুতা কিনবে না।

যে কাস্টমার একটি নির্দিষ্ট প্রোডাক্ট নির্ধারণ করেছে, তার অর্থ সে জুতো নিয়ে পূর্ব ধারণা নিয়ে এসেছে।  আপনার প্রয়োজন তাকে সেই নির্দিষ্ট প্রোডাক্ট ও তাঁর প্রয়োজন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করে কেনাকাটা সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করা।

এক্ষেত্রে তাকে কনফিউজ করে দিলে সে কখনোই আপনার ব্র্যান্ড থেকে কিনবে না।একইভাবে একজন কাস্টোমার যখন আপনার ব্র্যান্ড সম্পর্কে জানে, প্রোডাক্ট সম্পর্কে জানে এবং সে কি কিনবে সেটা নির্ধারণ করে রেখেছে। 

শুধুমাত্র সে পরিশোধ করে কিনতে চায়, তাকে যখন আবার পূর্বের অবস্থায় নিয়ে ব্র্যান্ড সম্পর্কে কথা বলবেন, কোন কোন জুতা কালেকশন রয়েছে সেগুলো বলবেন।  তখন সে বিরক্ত হয়ে আপনার দোকান অথবা ওয়েবসাইট ছেড়ে চলে যাবে।

আর এই কারণেই অধিকাংশ ই-কমার্স সেলারদের অভিযোগ, তারা অ্যাডে অনেক বেশি পরিমাণ টাকা খরচ করেও সেল করতে পারেন না। 

সেলস ফানেলের স্টেজ সমূহ

একজন অপরিচিত ব্যক্তিকে কিভাবে কাস্টমারের রুপান্তরিত  করবেন সে বিষয়ে একটি বিস্তারিত লেখা আমরা ইতিপূর্বে প্রকাশ করেছিলাম। যেখানে ধারনা দেয়া হয়েছিলো, একজন কাস্টোমার প্রথমবার আপনার বিজনেসে এসে কেনাকাটা সম্পন্ন করা পর্যন্ত যে পর্যায় ক্রমিক ধাপগুলো অতিক্রম করে সে প্রসঙ্গে।

আরো পড়ুনঃ

AIDA মডেল: একজন অপরিচিত ব্যক্তিকে কাস্টমারে রূপান্তরের পরীক্ষিত ফ্রেমওয়ার্ক

এই ধাপগুলিকে বলা হয় সেলস ফানেলের স্টেজ।

অর্থাৎ একজন কাস্টোমার আপনার বিজনেসের সাথে চারটি ভিন্ন ভিন্ন ধাপে যুক্ত হয়ে থাকে এবং প্রতিটি ধাপে একজন সেলারকে কাস্টমারের জন্য প্রয়োজনীয় ইনফর্মেশন প্রদান করতে হয় যা তাকে পর্যায়ক্রমে পরবর্তী স্টেজে নিয়ে যেতে উৎসাহী করে তোলে।

Awareness (অনুধাবন)

সম্পূর্ণ নতুন একজন কাস্টমার আপনার ব্র্যান্ড বা বিজনেস সম্পর্কে জানানো। এই ষ্টেজে কাস্টমার একটি নির্দিষ্ট সমস্যার সম্মুখীন হয় এবং তার সমাধান খুঁজতে থাকে। ঠিক এই মুহূর্তে একটি ব্র্যান্ড তার সামনে উপস্থিত হয় সেই সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে।কাস্টমার তখন সেই ব্র্যান্ড সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে ওঠে। তারা জানতে চায়, সেই ব্র্যান্ড তার জন্য কি ধরনের সমাধান অফার করছে। 

তখন কাস্টমারদের পেইন পয়েন্ট গুলো তুলে ধরুন আর তাঁর সাথে আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিসকে রিলেট করুন। প্রোডাক্ট ও সার্ভিস নিয়ে দৃষ্টিনন্দন গ্রাফিক ও ক্রিয়েটিভ তৈরি করুন। 

Interest (আগ্রহ)

এই ষ্টেজে এসে সেলার তাঁর কাস্টমারদের  প্রোডাক্ট সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করে।তাঁর প্রোডাক্ট ও সার্ভিস কাস্টমারের সমস্যাগুলো কীভাবে সমাধান করতে সক্ষম সে সম্পর্কে ধারণা প্রদান করে। কাস্টমার একটি ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট বা সার্ভিস এর প্রতি আগ্রহ বোধ করে। 

এই ষ্টেজে কাস্টমারদের আপনার প্রোডাক্ট ও সার্ভিস নিয়ে এমন সব বিস্তারিত কনটেন্ট প্রদান করুন। যা তাঁর সেই প্রোডাক্ট ও সার্ভিস নিয়ে আগ্রহকে বাড়িয়ে তুলবে। কাস্টমার তাঁর সমস্যাগুলোর সমাধানে আপনার প্রোডাক্ট ও সার্ভিসকে রিলেট করতে পারবে। 

সেজন্য,   Email campaigns, Blog posts, Lead magnets, Free trials, Retargeting campaigns এই সকল ধরনের কনটেন্ট ডিজাইন করতে পারেন। 

Desire (আকাঙ্ক্ষা)

এই ষ্টেজে  কাস্টমার প্রোডাক্ট ও সার্ভিস কেনার জন্য প্রস্তুত থাকে। এ অবস্থায় কাস্টমার একের অধিক ব্র্যান্ড কে তার কনসিডারেশন এর মধ্যে রাখে।সে তার শর্ট লিস্টে থাকা ব্র্যান্ডগুলো থেকেই কেনাকাটা করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। 

কি করবেন?

কাস্টমার এই ষ্টেজে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে তাঁর এই প্রোডাক্টটি প্রয়োজন । এবার তাকে প্রমান দিন আপনার প্রোডাক্ট ব্যবহার করে অন্য সকলে কি ধরনের সুফল পেয়েছে, তারা আপনার প্রোডাক্ট ওঁ সার্ভিস নিয়ে কি বলে। আপনি কাস্টমারদের ফ্রি স্যাম্পল প্রোডাক্ট অফার করতে পারেন, সার্ভিসের ক্ষেত্রে ডেমো অফার করতে পারেন। 

এই ষ্টেজে যে ধরনের কনটেন্ট কাস্টমারদের প্রদান করবেন, 

  • Testimonials
  • Pricing pages
  • Case studies (here’s how to create them)
  • Discount codes
  • Customer reviews and product recommendations
  • Live demos or tutorial webinars
  • Consultations
  • Product comparisons

Action (পদক্ষেপ)

এই স্টেজে এসে কাস্টমার একটি নির্দিষ্ট ব্যান্ডকে পছন্দ করে কেনা সম্পন্ন করে। ঝামেলা হীন কেনা সম্পন্ন করার সেরা অভিজ্ঞতা প্রদানই হচ্ছে এই ধাপের এর উদ্দেশ্য।

কাস্টমারদের কেনাকাটার সময়সীমাকে এগিয়ে নিয়ে আসতে লোভনীয় অফার, ডিস্কাউন্ট বা কুপন দিন। আপনার মূল লক্ষ্য হবে কীভাবে কাস্টমারদের কেনাকাটা করার গতিকে তরান্বিত করা যায়। 

যে ধরনের কনটেন্ট প্রদান করবেন, 

  • Insider or customer success tips
  • Special offers
  • Product implementation or training webinars
  • Bundled packages
  • Follow-up email campaigns 

কিভাবে আপনি আপনার বিজনেসের জন্য সেলস ফানেল তৈরি করবেন? 

বিজনেসের ধরন বা প্রোডাক্ট ও সার্ভিস এর প্রকারভেদে সেলস ফানেল ভিন্নতা রয়েছে। এক্ষেত্রে আপনি একজন দক্ষ বিজনেস কনসালট্যান্ট এর পরামর্শ নিয়ে আপনার জন্য আদর্শ সেলস ফানেল তৈরি করতে পারেন। উদাহরন স্বরূপ একটি ই-কমার্স কোম্পানি ফ্যাশন আইটেম সেলস ফানেল তৈরি করার পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো।

Step 1

প্রথমেই ভালোভাবে একজন আদর্শ কাস্টমারের আচরণকে বিশ্লেষণ করুন। তাহলে সঠিক কৌশল নির্ধারণ করতে সক্ষম হবেন। তারা কি ধরনের কনটেন্ট, কোন কোন মিডিয়া ব্যবহার করে এঙ্গেজ হচ্ছে এই বিষয়গুলোকে লিপিবদ্ধ করুন।

Step 2

দেখলেন আপনার কাস্টমারের সোশ্যাল মিডিয়াতে একটিভ থাকে এবং ভিডিও কনটেন্ট বেশি পছন্দ করছে। তাহলে আপনাকে দারুন সব ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তাদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।

Step 3

কাস্টমার যখন আপনার ব্যবসা সম্পর্কে জানবে, আপনার ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস গুলো নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করবে। তখন ল্যান্ডিং পেজ এর মাধ্যমে আপনার প্রোডাক্ট ও সার্ভিস সম্পর্কে ডিটেলস তথ্য কাস্টমারদের প্রদান করবেন। আগ্রহী কাস্টমারদের প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত ইনফর্মেশন সংগ্রহ করবেন। এটাকে লিড জেনারেশন বলা হয়।

Step 4 

কাস্টমার আপনার প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস গুলো দেখেছে কিন্তু এখনও কেনাকাটা সম্পন্ন করে নাই। সে আপনার কথা ভুলে যাবে।তাই এই ধাপে ইমেইল বা এসএমএস দিয়ে বিভিন্ন অফার অথবা প্রয়োজনীয় এডুকেশনাল কন্টেন দিন। যা তাকে আপনার ব্র্যান্ডের কথা মনে করিয়ে দেবে।

সেলস ফানেল এর সফলতা নির্ণয় করবেন কিভাবে?

সেলস ফানেল এর চারটি ভিন্ন ভিন্ন ধাপের প্রতিটি ক্ষেত্রেই সফলতা নির্ণয় করা প্রয়োজন। তা না হলে আপনার সেলস ফানেল টি কার্যকর কিনা সে সম্পর্কে কখনোই বুঝতে পারবেন না।

দেখে নেই কিভাবে বুঝবেন আপনার সেলস ফানেলটি কার্যকর নাকি আরও উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে।

Awareness বা অনুধাবন ধাপ 

একটি ব্র্যান্ডের উদ্দেশ্য থাকে কাস্টমারদের সামনে নিজেকে উপস্থাপন করা। এ ক্ষেত্রে সফলতা নির্ণয় করতে হয় আপনার মার্কেটিং ক্যাম্পেইনগুলো সর্বাধিক কতজন টার্গেট অডিয়েন্সকে রিচ করতে পারছে। যদি দেখেন পোটেনশিয়াল অডিয়েন্স সাইজ ১০ লাখ। কিন্তু মাত্র তিন লক্ষ মানুষকে আপনার অ্যাড গুলো দেখাছে, তবে ফানেল অপটিমাইজ করা প্রয়োজন।

Interest বা আগ্রহ ধাপ 

এই স্টেজের সফলতার নির্ণয় করতে হয় কাস্টমার আপনার দেয়া তথ্য গুলোর উপরে আস্থা রাখতে পারছে কিনা তার ওপরে। এটি বুঝবেন যখন তারা আপনার কনটেন্ট গুলার সাথে লাইক, শেয়ার বা কমেন্টের  মাধ্যমে যুক্ত হয়। যদি কাস্টমার কম এঙ্গেজ হয় অথবা নেগেটিভ কমেন্ট করে। তাহলে আপনার সেলস ফানেল ঘষামাজা করা প্রয়োজন।

Desire বা আকাঙ্ক্ষা ধাপ

আপনি বিভিন্ন ধরনের অফার এবং ডিসকাউন্ট প্রদান করছেন। তার মধ্যে কতজন কাস্টমার সেই অফার বা ডিসকাউন্ট ব্যবহার করছে, সেটির পরিমাণে বলে দেয় স্টেজে ফানেল কতোটা সফল। প্রমোশনাল অফারের বিপরীতে প্রাপ্ত কাস্টমার অর্ডার সংখ্যায় আকাঙ্ক্ষা স্টেজের সফলতার নির্ণায়ক।

Action বা পদক্ষেপ ধাপ 

কেনাকাটা সম্পূর্ণ করার জন্য কাস্টমার আপনার কল টু অ্যাকশন গুলার সাথে কিভাবে যুক্ত হচ্ছে সেটি এই স্টেজের সফলতা নির্ণয় করে। যদি লক্ষ্য করেন আপনার প্রোডাক্ট ওঁ সার্ভিসের অ্যাডের সাথে থাকা কল টু অ্যাকশনে কাস্টমার খুব বেশি যুক্ত হচ্ছে না তবে  অপটিমাইজেশন প্রয়োজন।

আরও পড়ুনঃ বিক্রি বৃদ্ধির জন্য ফানেল অপটিমাইজেশন কৌশল

পরিশেষে

বর্তমান সময়ে কেনাকাটায় কাস্টমারদের সামনে প্রচুর অপশন রয়েছে। তাই আপনি যদি সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য তাদের না দেন তবে তারা আপনাকে কখনোই মূল্যায়ন করবে না।ঠিক এ কারণেই বেশিরভাগ অনলাইন বা অফলাইন বেচাকেনায় একটি ব্র্যান্ডের সমস্ত মার্কেটিং প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।

শুধুমাত্র পরিকল্পিত সেলস ফানেল তৈরি করে কাস্টমারদের সঠিক সময়ে, সঠিক তথ্য গুলো সুসজ্জিত ভাবে সরবরাহ করলেই একজন কাস্টমারকে তা কেনার সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহ দেয়।

পরিকল্পনাহীন মার্কেটিং এর পেছনে লক্ষ টাকা ব্যয় করলেও সেখানে থেকে আপনি পরিমিত সেল পাবেন না এবং এই সত্যটি আপনাকে সবার প্রথমে জানতে হবে।

একবার ভাবুন তো, আপনি যখন বিজনেসের জন্য একটি অ্যাড দেওয়ার পরিকল্পনা করেন, তখন আপনি কি চিন্তা করেছেন সেই অ্যাড সেলস ফানেলের কোন স্টেজের  জন্য ডিজাইন করছেন? এবং আপনি সেখান থেকে কি লক্ষ্য অর্জন করতে চান?

যদি এই প্রশ্নের উত্তর আপনার জানা না থাকে, তবে আপনার বিজনেসের সেলস ফানেল প্রয়োজন।

Summary
ফেসবুক মার্কেটিং এর জন্য ফেসবুক সেলস ফানেল: কী, কেন, কীভাবে
Article Name
ফেসবুক মার্কেটিং এর জন্য ফেসবুক সেলস ফানেল: কী, কেন, কীভাবে
Description
একজন অডিয়েন্সকে কাস্টমারে পরিনত করতে হলে কিছু প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে তাকে নিয়ে যেতে হয়। অডিয়েন্সকে সেই সকল প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে অতিক্রম করে শেষ প্রান্তে পৌঁছালে কাস্টমারে রুপান্তরিত হয়। এই প্রক্রিয়া সেলস ফানেল নামে পরিচিত। এই আর্টিকেলে সেই প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
Author
Publisher Name
DeshiCommerce Blog
Publisher Logo
এই পোস্টটি শেয়ার করতে ক্লিক করুনঃ

Subscribe
Notify of
guest

2 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Mosaddek
Mosaddek
2 years ago

Thanks a lot

ইকমার্স সম্পর্কিত বিভিন্ন টিপস এবং নিউজ পেতে আমাদের সাথে থাকুন

* indicates required